بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ



ইসলামী বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিকথা
2005, North Mugultooly by 
P.O. Bandar, P.S: Sadarghat
   Post Code: 4100, Chattogram(Chittagong)
                                                     BANGLADESH 

 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
সাময়িকী
ইসলামী বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বার্তা

সূচীপত্র
এতে আছেঃ


বিষয়াবলী

জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সংজ্ঞা
বীজগণিত ও মুসলমান
জ্যামিতি ও মুসলমান
জাবালে নূর, গারে হেরাঃ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূচনাস্থল
(১) দারুল আরকাম (২) আসহাবে সুফফা (৩) বায়তুল হিকমাহ (৪)আল হামরা (৫)আল আজহার ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান চর্চার আবাসস্থল
কম্পিউটার আবিস্কারের জন্মকথা
কোরআন-সূন্নাহর আলোকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির গ্রহণ-বর্জন নীতিমালা
মুসলিম বিজ্ঞানীদের ইতিকথা
দিনে সম্রাট, রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞানী
মাফাতাহিল উলুমঃ পৃথিবীর প্রাচীনতম ইসলামী বিশ্বকোষ
কর্ডোভা ইসলামী লাইব্রেরী
আস্তারলবঃ মুসলিম বিজ্ঞানীদের অনন্য আবিস্কার
আরব মুসলিম বিজ্ঞানী
আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির স্থপতিঃ আরব মুসলিম বিজ্ঞানী
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারসিক-ইয়াহুদী বিজ্ঞানীর ভূমিকা
চীনা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিকথা
বিশ্ব সভ্যতায় চীন
চীন-আরব মুসলিম আন্তঃবৈজ্ঞানিক সম্পর্ক
জাপানী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস
আরব (স্যারাসিন) জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস
জ্ঞান অনুসন্ধানে আরব অভিযাত্রীর ভারত প্রবেশ
অষ্টম শতাব্দী থেকে মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রযাত্রার ইতিকথা
গণিত এবং বিজ্ঞান
গণিত বিজ্ঞানে মুসলমানদের ভূমিকা

 ইসলামী বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিকথা

জ্ঞান কি?
What is Knowledge?

কোন বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে জানা বা বুঝার অনুভব-উপলদ্ধি-কে জ্ঞান বলা যেতে পারে। এই জ্ঞান বাস্তব দর্শন,শোনা কিংবা নিবিড় অধ্যয়নের মাধ্যমে হতে পারে। এই জ্ঞান তাই প্রধানতঃ দু'প্রকার । যথাঃ (১) তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং (২) বাস্তব বা ব্যবহারিক জ্ঞান।

 দর্শন বিজ্ঞানের আলোচিত জ্ঞান-কে "তত্ত্ব জ্ঞান" বলা হয়। দার্শনিক প্লেটো জ্ঞানকে "প্রমাণিত সত্য বিশ্বাস" বলে  সংজ্ঞায়িত করেন। 

অভিজ্ঞতালদ্ধ কিংবা অনুভব-উপলদ্ধিজাত পঠিত এবং লিখিত উপকারী অথবা অপকারী সর্ব প্রকার জ্ঞান-কে ইসলামী পরিভাষায়  "ঈলম" এবং বিজ্ঞান বা প্রজ্ঞা-কে "হিকমাহ" বলা হয়। উপকারী ঈলম বা জ্ঞান-কে পবিত্র হাদিসে ইসলামী পরিভাষায় "ঈলমান নাফিয়ান" বলা হয়েছে।


                 Computer: আধুনিক বিশ্বের
                 সেরা প্রযুক্তি (Technology)


কম্পিউটার কি?

কম্পিউটার আবিস্কারের জন্ম কাহিনী

সিপিইউ হলো computer system unit এর মধ্যে বিদ্যমান সিলিকন বিশেষ। যার মাধ্যমে computerএর সমস্ত কার্যকলাপ হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ স্মৃতি এবং গাণিতিক যুক্তির অংশসহ বিশাল দায়িত্ব পালন করে সিপিইউ। আমাদের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে মস্তিস্ক যেমন গুরুত্বপূর্ণ CPU কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ঠিক তেমন গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়ার উপাদান। আধুনিক মাইক্রোকম্পিউটারের CPU এর অন্যতম দিক হলো এতে মাইক্রোপ্রসেসর এর ব্যবহারের সুযোগ বিদ্যমান । তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং প্র্রক্রিয়াকরণের ফলাফল সবই সম্পন্ন করে CPU যার প্রধান অংশঃ

A.L.U= Arithmatic Logical Unitএর দ্বারা কম্পিউটার সব ধরণের গাণিতিক সমস্যার সমাধান দেয়।

খ. C.U. =Control Unitপ্রাপ্ত নির্দেশ নির্দিষ্ট অংশ প্রেরিত হয়ে এর মাধ্যমে ফলাফল মনিটরে প্রতিফলিত হয় এবং নির্দেশক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পায়।
গ্রীক compute শব্দ থেকে Computer কথাটির উৎপত্তি যার অর্থ গণনাযন্ত্র। বর্তমানে computer দিয়ে ১)গাণিতিক ২) যৌক্তিক (লজিক) সিদ্ধান্তমূলক ডাটা প্রেরণ (Data input) করলে সেটা প্রক্রিয়াকরণ (processing) হওয়ার পর ফলাফল (output) পাওয়া যায়।

Computer এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

গণনাযন্ত্র হিসাবে সর্বপ্রথম চীনে আবিস্কৃত হয় অ্যাবাকাস নামক এক যন্ত্র। Abacas a wooden frame with halls strung on paralled wires. এটি হলো সর্বপ্রথম অংক ভিত্তিক গণনা যন্ত্র। (সূত্রঃ আইটি সাপোর্ট সিস্টেম-১, (বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিতডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স২য় সেমিস্টার২০১৯)পৃঃ ০১
এর পর পরই অ্যাবাকাসের কাছাকাছি একটি গণনাযন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয় জাপানে যার নাম সরোবান ( Soroban)  সরোবান খৃষ্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীর সময়কার গণনাযন্ত্র। এটি যোগ-বিয়োগ করতে সক্ষম।

লগারিদম

১৬১৭ সালে জন নেপিয়ার তৈরি করেন লগারিদম। এর মধ্যে মোট ৯টি সারিতে নাম্বারকে আড়াআড়িভাবে করে সাজানো হয়। এটিকে নেপিয়ার বোনসও বলা হয়। এটি গুণ ও  ভাগ করতে সক্ষম। এটি ১৭ শতাব্দী থেকে শুরু করে ১৯ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

ডিফারেন্স ইন্জিন
১৮১২ সালে বৃটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ আবিস্কার করেন ডিফারেন্স ইন্জিন।

অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন
মূলতঃ ১৮৩৩ সালে চার্লস ব্যাবেজই অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন উদ্ভাবন করেন। এটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক ও সব ধরণের গাণিতিক কাজে সক্ষম। এটি প্রোগ্রাম ( Programme) সংরক্ষণ করতে পারতো এবং ইনস্ট্রাকশন (Instruction)  মেনে চলতে পারতো। অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিনে সর্বপ্রথম বাইনারি কোড (Binary Code System) অর্থাৎ শুন্য (০) এবং এক (১) এর ব্যবহার শুরু হয়। (প্রাগুক্ত পৃষ্ঠা ১৭)

লেডি অ্যাড অগাস্টাঃ পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার
কবি লর্ড বেয়ন এর মেয়ে লেডি অ্যাডা অগাস্টা বেয়ন ১৮৪৩ সালে বাইনারি ইনস্ট্রাকশনের সূচনা করেন। তাই পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয় লেডি অ্যাডা অগাস্টা বেয়ন-কে। (প্রাগুক্ত পৃঃ ১৭)

হলারিথ মেশিন ( Hollerith Machine)

১৮৯০ সালে আবিস্কৃত হয় প্রথম বিদ্যুৎ চালিত মেশিন হলারিথ । আবিস্কারক হারম্যান হলারিথ। এটি ডাটা রেকর্ডিংটেক্সট (পাঠ্যক্রম) পড়তে পারতো। এর অপর নাম টেবুলেটিং মেশিন (পৃঃ ১৮)

বেল-১
১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত Computer Company IBM. এই কোম্পানি যে যন্ত্র তৈরি করে তার নাম Bell-1. এটি একটি Mechanical Complex Calculator.

হার্ভার্ড ইউনিভাসিটি

১৯৩০ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির হাওয়ার্ড একিন (Howard Aiken)  IBM (International Business Machine) যৌথভাবে প্রথম Electrical Computer আবিস্কার করেন। এটির নাম Mark-1. এটি ৫১ ফুট লম্বা এবং ৮ ফুট উঁচু ছিল। ওজন ছিল ৫ (পাঁচ) টন। যন্ত্রাংশ সংযোগ দিতে ৫০০ (পাঁচশত) মাইল লম্বা তারের প্রয়োজন হতো। এটি এখনো প্রথম Computer স্মারক (স্মৃতি) হিসাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সযত্নে সংরক্ষিত আছে।  (পৃঃ ১৯)

উন্নত কম্পিউটার
১৯৩৭ সালে ডাঃ জন অ্যাটানাসোফ এবং জন বেরি একত্রে Computer-কে উন্নত করেন। তাঁদের Computer এর নাম ছিল ABC (Atanasoff Berry Computer).

Computer এর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে Computer সিন্ধু থেকে ক্রমশঃ বিন্দুতে পরিণত হতে চলেছে। যার ফলে এখন পকেট Computer সময়ের ব্যাপার মাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। Computer এর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধাপ বা স্তকে বলা হয় প্রজন্ম (Generation) ধাপগুলি নিম্নরূপঃ
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারঃ ১৯৪০ সাল হতে ১৯৫৬ সাল পর্যন্তঃ হাজার হাজার ডায়োড ভাল্ভরেজিস্টারক্যাপাসিটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। এতে ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হতো যা কয়েকটি ঘর জুড়ে বিস্তৃত হতো। বিশাল আয়তন বিশিষ্ট প্রথম প্রজন্মের Computer চালু অবস্থায় ভীষণ গরম হয়ে যেতো। তাই যাতে পুড়ে না যায় সে জন্য মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হতো। এটি সীমিত তথ্য ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হতো প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তি।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারঃ ১৯৫৭ সাল হতে ১৯৬৩ সাল পর্যন্তঃএতে ট্রানজিস্টার ব্যবহৃত হতো যা Computer-এ বিপ্লব সাধন করে। উল্লেখ্য১৯৪৮ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরীতে উইলিয়াম শকলিজন বার্ডিন এবং এইচ ব্রিটেন যৌথভাবে  এ টানজিস্টার তৈরি করেন। এ ট্রানজিস্টার Computer প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেন। এটি প্রথম প্রজন্মের Computer থেকে তুলনামূলক অনেক ছোট এবং কম বিদ্যুৎ-তে চালিত।

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারঃ ১৯৬৪ সাল হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্তঃ রবার্ট নয়েস ও জ্যাক কিলবি প্রায় একই সময় পৃথকভাবে বড় সার্কিট ক্ষুদ্র করার পদ্ধতি আবিস্কার করেন। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ছোট সার্কিটকে IC Integrated বলা হয়। এ প্রজন্মের Computer-এ IC Integrated ব্যবহৃত হওয়ায় এটি দ্বিতীয়  প্রজন্মের Computer থেকে তুলনামূলক অনেক ছোট এবং উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে যায়। এতে প্রথমবারের মত প্রিন্টার ব্যবহার শুরু হয়।

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারঃ ১৯৭১ সাল হতে অদ্যাবধি (২০১৯) সাল পর্যন্তঃ ১৯৭১ সাল থেকে ৪র্থ প্রজন্ম শুরু হয়। LSI (Large Scale Integration)  VLSI (Very Large Scale Integration) এবং Semi Conductor Memory দিয়ে এ প্রজন্মের Computer তৈরি। VLSI দিয়ে তৈরি ক্ষুদ্রাকৃতির এই কম্পিউটার-কে বলা হয় মাইক্রো কম্পিউটার। আমেরিকার জন ব্লাংকার বেকার ১৯৭১ সালে কেনব্যাক (Kenbak) নামক প্রথম মাইক্রো-কম্পিউটার তৈরি করেন। পরে ১৯৭৭ সালে মাইক্রো কম্পিউটার পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে ১৯৮১ সালে IBM কোম্পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যখন Computer উৎপাদন শুরু করে।  IBM কোম্পানি কর্তৃক প্রস্ত্ততকৃত Computer আকারে আরও ছোট হয়ে আসে। তবে বেড়ে যায় এর গতি। এতে ROM (Read only Memory), PROM, EPROM প্রভৃতি স্মৃতি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, Programming Language, DOS, Widows, Unix Operating System এ প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতে থাকে। (প্রাগুক্ত পৃঃ ২৪)


পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারঃ এটি ৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার থকে শক্তিশালী করার কাজে গবেষণা চলছে। এতে Supper VISI (Very Large Scale Integration) Clip এবং Optical Fibar এর সমন্বয়ে এ প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি। এতে অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও প্রচুর পরিমাণে ডাটা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন করার গবেষণা চলছে । (পৃঃ ২৫)

বৈজ্ঞানিক গবেষণা কি এবং কেন?

গবেষণা (ইংরেজি: Researchহল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বিজ্ঞানীদের কার্যাবলী। যিনি গবেষণা করেন বা গবেষণা কর্মের সাথে জড়িততিনি গবেষক বা গবেষণাকারী নামে পরিচিত।

সুনির্দিষ্ট প্রজেক্ট (প্রকল্প) বা উদ্দেশ্যের আওতায় প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক তত্বতথ্যউপাত্ত এবং আনুষঙ্গিক বৈজ্ঞানিক সাজ-সরন্জাম বা প্রযুক্তি সংগ্রহ করতঃ  এতদ্বিষয়ে নিরলস  পরীক্ষা-নিরীক্ষাসমীক্ষাপর্যালোচনাপর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিবিড় তথ্য বিশ্লেষণ ও সূত্র উদ্ভাবন করতঃ উদ্ভাবিত সূত্রমতে গবেষণা সম্পকির্ত গৃহীত অনুসিদ্ধান্তও সিদ্ধান্ত এবং চূড়ান্ত   ফলাফল গ্রহণ উপস্থাপন এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা সন্নিবেশিত করা হয়। গবেষণার প্রধান ধাপসমূহ হচ্ছে:

গবেষণার বিষয়বস্তুলক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চিহ্নিতকরণ
● প্রাসঙ্গিক গবেষণা ও তথ্য পর্যালোচনা
গবেষণার সমস্যা নির্দিষ্টকরণ
● অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও গবেষণার প্রশ্ন নির্দিষ্টকরণ
 তথ্য সংগ্রহবিশ্লেষণ
 প্রাথমিক ও চূড়ান্ত গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিকরণ।



        

 

হেরা গুহা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূচনাস্থল
সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়ামুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


গুহার প্রবেশপথ

হেরা (আরবিحراء‎‎ irāʾ বা হেরা গুহা (غار حراء Ġār irāʾ সৌদি আরবের মক্কায় জাবালে নূর পর্বতে অবস্থিত একটি গুহা।

সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার স্থান হিসেবে এই গুহা প্রসিদ্ধ। ইসলামের ইতিহাসমতেপবিত্র লাইলাতুল ক্বদরে আল্লাহর তরফ থেকে ফেরেশতা সর্দার জিব্রাইল আলাইহিমুস সালাম এই গুহায় সূরাহ অআল আলাক্বের প্রথম ৫ আয়াত নিয়ে সর্বপ্রথম হযরত  মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এই হেরা গুহায় মোরাকাবামোশাহাদারত অবস্থায় কুরআনের বাণী নিয়ে এসেছিলেন।
'জাবালে নূরঃ

সৌদি আরবের মক্কা নগরীর কাছে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক পর্বতের নাম জাবালে নূর। আক্ষরিক অর্থে আরবি 'জাবালে নূরশব্দের মানে দাঁড়ায় 'আলোর পর্বত' এই আলো শুধু আক্ষরিক অর্থেই সীমাবদ্ধ নেই। কেননাএই পর্বতে অবস্থিত হেরা গুহায় নাজিল হয়েছিল পবিত্র আল কোরআন।

দারুল আরকামমক্কা আল মুয়াজ্জিমা

দারুল আরকাম এর শাব্দিক অর্থ হলোআরকাম নামক ব্যক্তির ঘর। আরকাম একজন সাহাবীর নাম। উনার পূর্ণ নাম হলোআরকাম ইবনে আবুল আরকাম। শুরু যুগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন ইসলামে দীক্ষিত সাহাবীদেরকে নিয়ে আরকাম রা. এর ঘরে সমবেত হতেন। এবং তাদেরকে দীনী বিষয়াদি শিক্ষা দিতেন। এটা হলোইসলামের প্রথম মাদরাসা বা ধর্মীয় পাঠশালা। https://ar.wikipedia.org 

আসহাবে সুফফা

সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার  মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের কক্ষগুলো এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব। প্রাথমিকভাবে সুফফা মুহাজির সাহাবিদের অবস্থানের জন্য নির্মিত হয় বলে এটি ‘সুফফাতুল মুহাজিরিন’ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে এটি বাইরে থেকে আগত শিক্ষার্থী সাহাবি এবং মদিনার উদ্বাস্তু সাহাবিদের রাত্রিকালীন আবাসস্থল ও দিবাভাগে শিক্ষায়তন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিপুলসংখ্যক সাহাবি এখানে অবস্থান করতে পারতেন। এখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সাহাবিদের রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পতœীদের কক্ষগুলোতেও বসতে হতো। সুফফা ছিল ইসলামের প্রথম আবাসিক মাদরাসা। 


 ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিকথা
রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রধান কাজঃ শিরকমুক্ত একত্ববাদী একটি দ্বীন ধর্ম  মানব জাতিকে উপহার দেয়া। তাই ফতেহ মক্কার পর মাত্র একবার হজ্ব করার নসীব হয়েছে।অতঃপর আল্লাহপাক তাঁর এই দুনিয়াবী জিন্দেগীর অবসান ঘটিয়ে মদিনা মুনওয়ারার রিয়াজুল জান্নাহ-তে শায়িত রয়েছেন।ফলে ইসলামী রাজ্য শাসন ও রাজ্য বিস্তারের দায়িত্বভার রেখে যান তদীয় ৪ শীর্ষ সাহাবায়ে কেরাম যথাক্রেম (১) হযরত আবদুল্লাহ আবুবকর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু (২) হযরত ওমর খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু  (৩) হযরত ওসমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু   এর উপর। যাঁদেরকে বলা হয় খোলাফায়ে রাশেদা। অতঃপর হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমীরে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুহযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ প্রমুখ ইসলামী রাজ্য শাসন ও সম্প্রসারণে অবিস্মরণীয় ভূমিকা ও অবদান রেখেছেন আল্লাহ তায়ার অশেষ ফজল-করমতায়িদ-মদদে।  

 
গণিত ও বিজ্ঞান

সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়ামুক্ত বিশ্বকোষ
গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা।
১৭শ শতক পর্যন্তও কেবল পাটীগণিতবীজগণিত  জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরাপরে মুসলমান বিজ্ঞানীরা এগুলি সংরক্ষণ করেনঅনেকে গবেষনা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও  গণিত র্চ্চা হতমধ্যযুগে ১৮শ শতকে  আইজাক নিউটন  গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তাঁর সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি এককস্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্তও কেবল পদার্থবিজ্ঞানীরসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন।
 ইতিহাস ও গণিতবিশ্ব
বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ পীথাগোরাস(৫৭০-৪৯৫ খ্রিষ্টপূর্ব) গণনা করা ছিল আদিমতম গাণিতিক কর্মকাণ্ড। আদিম মানুষেরা পশু ও বাণিজ্যের হিসাব রাখতে গণনা করত। আদিম সংখ্যা ব্যবস্থাগুলি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল এক বা দুই হাতের আঙুল ব্যবহার করে সৃষ্ট। বর্তমানের ৫ ও ১০-ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিস্তার এরই সাক্ষ্য দেয়। মানুষ যখন সংখ্যাগুলিকে বাস্তব বস্তু থেকে পৃথক ধারণা হিসেবে গণ্য করা শিখল এবং যোগবিয়োগগুণভাগএই চারটি মৌলিক অপারেশন বা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করলতখনই পাটীগণিতের যাত্রা শুরু হল। আর জ্যামিতির শুরু হয়েছিল রেখা ও বৃত্তের মত সরল ধারণাগুলি দিয়ে। গণিতের পরবর্তী উন্নতির জন্য চলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেযখন ব্যাবিলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল।

প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের গণিত
ব্যাবিলনিয়ার গণিত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি এই সভ্যতার নিদর্শনবাহী কাদামাটির চাঙড় থেকেযেগুলির উপর ব্যাবিলনীয়রা কীলক আকৃতির খোদাই করে করে লিখত। এই লেখাগুলিকে কিউনিফর্ম বলা হয়। সবচেয়ে প্রাচীন চাঙড়গুলি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ সালের বলে ধারণা করা হয়। খোদাইগুলির বেশির ভাগ গণিতই ছিল বাণিজ্য বিষয়ক। ব্যাবিলনীয়রা অর্থ ও পণ্যদ্রব্য আদানপ্রদানের জন্য পাটীগণিত ও সরল বীজগণিত ব্যবহার করত। রাষ্ট্রধর্মালয় ও জনগণের মধ্যে সম্পদ কীভাবে বন্টিত হবে তা হিসাব করতে পারত। খাল কাটাশস্যাগার নির্মাণ ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মের জন্য পাটীগণিত  জ্যামিতির ব্যবহার হত। শস্য বপন ও ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্য পঞ্জিকা নির্ধারণেও গণিতের ব্যবহার ছিল।

ব্যাবিলনীয় সংখ্যা
বৃত্তকে ৩৬০টি ভাগে বা ডিগ্রীতে বিভক্ত করা এবং প্রতি ডিগ্রী ও মিনিটকে আরও ৬০টি ভাগে বিভক্ত করার রীতি ব্যাবিলনীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে এসেছে। ব্যাবিলনীয়রাই একেক দিনকে ২৪ ঘণ্টায়প্রতি ঘন্টাকে ৬০ মিনিট ও প্রতি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করে। তাদের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ৬০-ভিত্তিক। ১-কে একটি কীলকাকৃতি খাঁজ দিয়ে নির্দেশ করা হত এবং এটি বারবার লিখে ৯ পর্যন্ত নির্দেশ করা হত। ১১ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি ১ এবং ১০-এর জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন ব্যবহার করে নির্দেশ করা হত। ৬০-এর চেয়ে বড় সংখ্যার জন্য ব্যাবিলনীয়রা একটি স্থাননির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করত। স্থানিক মানের এই ধারণার উদ্ভাবন গণনাকে অনেক এগিয়ে দেয়। এর ফলে একই প্রতীক বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে একাধিক মান নির্দেশ করা সম্ভব হয়। ব্যাবলিনীয়দের সংখ্যা ব্যবস্থায় ভগ্নাংশওনির্দেশ করা যেত। তবে তাদের ব্যবস্থায় শূন্য ছিল নাএবং এর ফলে দ্ব্যর্থতার সৃষ্টি হয়।

প্রাচীন মিশরীয়দের গণিত

মিশরীয়রা তাদের স্তম্ভগুলিতে হায়ারোগ্লিফের মাধ্যমে সংখ্যা অঙ্কিত করেছিলকিন্তু মিশরীয় গণিতের আসল নিদর্শন হল আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দুইটি প্যাপিরাস। এগুলিতে পাটীগণিত ও জ্যামিতির নানা সমস্যা আছেযার মধ্যে বাস্তব সমস্যা যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ তৈরির জন্য কতটুকু শস্য লাগবেএক জাতের শস্য ব্যবহার করে মদের যে মান পাওয়া যায়অন্য জাতের শস্য কতটুকু কাজে লাগিয়ে সেই একই মান পাওয়া যায়তার সমস্যা।

মিশরীয় বেতন নির্ণয়েশস্যক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ও শস্যাগারের আয়তন নির্ণয়েকর নির্ণয়ে ও নির্দিষ্ট কাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় ইটের সংখ্যা বের করতে গণিতকে কাজে লাগাত। এছাড়াও পঞ্জিকা গণনাতেও তারা গণিতভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ব্যবহার করত। পঞ্জিকার সাহায্যে তারা ধর্মীয় ছুটির তারিখ ও নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় নির্দেশ করতে পারত।


গণিতের মৌলিক ধারণাসমূহ
অঙ্ক
 ভারতীয় সংখ্যার দশটি অঙ্কমানের উর্ধ্বক্রমে।
গণিতে অঙ্ক হলো সংখ্যা প্রকাশক চিহ্ন। কোনো সংখ্যায় একটি অঙ্কের দুধরণের মান থাকেনিজস্ব মান ও স্থানীয় মান। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে শুরু করে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্ক আছে। এছাড়াও রয়েছে আরো নানা ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি যেমনঃ বাইনারি( দুই ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি)অক্টাল ( আট ভিত্তিক)হেক্সাডেসিমাল ( ষোলো ভিত্তিক)। তবে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিই বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতি ।
গণিতের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ
পরিমাণ
পরিমাণ বিষয়ক গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যা। শুরুতেই আলোচিত হয় স্বাভাবিক সংখ্যা ও পূর্ণ সংখ্যা এবং এদের উপর সম্পন্ন বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া বা অপারেশন আলোচিত হয় পাটীগণিতে। পূর্নসংখ্যাগুলির গভীরতর ধর্মগুলি আলোচিত হয় সংখ্যাতত্ত্ব শাখায়। ফার্মার শেষ উপপাদ্য এই শাখার একটি বিখ্যাত ফলাফল। এখনও সমাধান হয়নি এরকম দুইটি সমস্যা হচ্ছে দ্বৈত মৌলিক সংখ্যা অনুমান এবং গোল্ডবাখের অনুমান।

ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্বের পথে আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসলামী সৃষ্টি তত্ত্বের ইতিকথাঃ

নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আ'লা- রাসুলিহিল কারিমআ'ম্মা বাদ।

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم

 

بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ

أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَى أَنْ يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ بَلَى وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ

 “যিনি নিজ ক্ষমতাবলে অআকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি ওদের অনুরূপ  সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহা স্রষ্টা, সর্বজ্ঞ”(সূরাহ ইয়া-সীনঃ ৩৬:৮১, ছহীহ কোরআন শরীফ, মূল: তাফসীর ইবনে কাসীর এবং তাফসীরে আশরাফী, (বঙ্গানুবাদ )

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেনতিনি কেবল বলেন হওফলে তা হয়ে যায়।” (সূরাহ ইয়া-সীনঃ ৩৬:৮২তাফসীর ইবনে কাসীর এবং তাফসীরে আশরাফী)

বিশ্ব বলিতে পূর্বে কিছুই ছিলনা। (ফাতওয়ায়ে সিদ্দিকীন১ম খন্ডপৃষ্ঠাঃ ৭৪কুরআন হাদীস রিসার্চ সেন্টার (ফুরফুরা দরবারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান)প্রকাশনায়ঃ ইশায়াতে ইসলামকুতুবখানামার্কাজে ইশায়াতে ইসলাম২/২দারুস সালামমীরপুরঢাকা-১২১৬)প্রকাশকালঃ সাবান-১৪২০হিজরিনভেম্বর ১৯৯৯ ঈসায়ী)

গোটা সৃষ্টিকূলের মধ্যে আল্লাহ তাআ'লার কুন্ ফা ইয়া কুনের তাজাল্লীই বিরাজমান” (প্রাগুক্ত পৃঃ ৩৮)।

আসমান-যমীনআরশ কুরসী লাওহ-কলমগাছ পালাবৃক্ষ লতাএক কথায় দৃশ্যমান ও অদৃশ্য যত কিছু রয়েছে সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ” (প্রাগুক্ত পৃঃ ৩৩)। “আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বস্তুকে পূর্ব উপাদান ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন” (প্রাগুক্ত পৃঃ ১৬২)।

(আল্লাহপাক) বিশেষ মুছলেহাতের কারণে প্রথমে বিনা উপাদানে উপকরণে সৃষ্টি করেসেই সব উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তু সৃষ্টি করার ব্যবস্থা চালু করেছেন

 

(সূত্রঃ ফাতাওয়ায়ে সিদ্দিকীন১-৪ খন্ডপৃষ্ঠা ১৬৩)।

উল্লেখ্যএক সময় কেবলই আল্লাহ (ﺎﻠﻠﻪ) আর আল্লাহ-ই ছিলেন। মহান আল্লাহ ব্যতিত সৃষ্টি (ﻣﺨﻟﻖ) সত্বার কোন অস্তিত্ব কখনই ছিল না। কোন এক মহাসন্ধিক্ষণে আল্লাহপাক তাঁর কুদরতি এক মহাপরিকল্পনার (Master Plan)অধীনে কুন’ হয়ে যাও‘’- এই কুদরতি আদেশ বা হুকুমবলে সম্পূর্ণ নাই’ (Nil/Zero)থেকে কোন প্রকার জাগতিক তত্ত্বতথ্যউপাত্তসূত্রআইন-কানুনবিধি-বিধান থেকে সম্পূর্ণ পুতঃপবিত্র (সুবহান) এবং অনির্ভরশীল(স্বমাদ) হয়ে সৃষ্টি করলেন এক মহাসৃষ্টি সত্বা (Great Creationবা ﻣﺨﻟﻖ)-যাতে সম্মিলিতভাবে (Combined) নিহিত ছিল আকাশ/মহাকাশ[(ﺍﻠﺴﺎﻮﺍﺕ)( (Sky)] ও জমিন [ﻼﻠﺭﺽEarth (পৃথিবী) ]

 আবার কোন এক বিশেষ মুহুর্তে তা পৃথক করে আজকের আসমান ও জমিন-এই দুটি পৃথকপৃথক সত্বা সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক আল কোরআনে ফরমান, “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যেআকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিলঅত:পর আমি উভয়কে খুলে দিলাম। (সূরা আল-আম্বিয়ার ৩০নং আয়াত)।

 “উভয় (আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী)-কে খুলে দিলাম”-খুলে দেয়ার এই পরম-চরম মুহুর্তটিকেই খুব সম্ভবতঃ বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হচ্ছে মহাবিস্ফোরণ’ (Big Bang)এবং খুলে দেয়ার পূর্ব মুহুর্তের (আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী একত্রিত রূপ-কে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয়েছে   Highest Energetic Radiation (HER).

 উল্লেখ্য যেমহাবিস্ফোরণের পর আকাশমন্ডলীর এ অবস্থাকে সূরা হা-মিম-আস্- সিজদার ১১নং আয়াতে দুখান’ নামে অভিহিত করে আল্লাহ পাক ফরমান: অতঃপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেনযা ছিল ধুম্রকুঞ্জ (দুখান)।” (পবিত্র কোরআনুল করীমঃ তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআনপৃষ্ঠাঃ ১২৯৪)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :     (১) বয়ানুল কোরআনে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় যেপ্রথমে পৃথিবীর উপকরণ সৃজিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ধুম্রকুঞ্জ এর আকারে আকাশের উপকরণ নির্মিত হয়েছে। এরপর পৃথিবীকে বর্তমান আকারে বিস্তৃত করা হয়েছে এবং এতে পর্বতমালাবৃক্ষ ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর আকাশের তরল ধুম্রকুঞ্জ এর উপকরণকে সপ্ত আকাশে পরিণত করা হয়েছে। (পবিত্র কোরআনুল করীমঃ তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআনপৃষ্ঠাঃ ১১৯৯-১২০০)

 

 (২)পবিত্র কুরআনের মতেবিশ্ব জগৎ আদিতে ছিল একটি বিশালকার একক পিন্ডাকৃতির বস্তু-সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অণু-পরমাণু বিশিষ্ট গোলক-যাকে দুখান বলা হয়েছে। এই দুখান হলো স্তর বিশিষ্ট এমন এক গ্যাস জাতীয় পদার্থ যা স্থিরভাবে ঝুলানো এবং যার মধ্যে বস্তু-সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অণু কণা উচ্চতর বা নিম্নতর চাপের দরুণ কখনও কঠিনএমনকি কখনও বা তরল অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। মহাকালের বিভিন্ন পর্যায়ে সেই মহাপিন্ডটি খন্ড বিখন্ড হয়ে তৈরী হয়েছে এক একটি নীহারিকা বা ছায়াপথ এবং সেই সব ছায়াপথ সূর্যের মত কোটি কোটি নক্ষত্র নিয়ে একটা একটা পৃথক জগৎ রূপে মহাশূণ্যে সঞ্চারমান। আদি গ্যাসীয় পিন্ডের খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়া বিশালকার টুকরাগুলি কালক্রমে আবার একীভুত হয়ে সূর্যের মত এক একটি নক্ষত্র সৃষ্টি করেছে। ...... বিজ্ঞানীরা বলছেনবিশ্ব সৃষ্টির আদিতে ছিল নীহারিকা’ বা নেবুলা’ যা মূলতঃ গ্যাসীয় ধুম্রপিন্ড এর অনুরূপ। দেখা যাচ্ছেবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বক্তব্য আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কৃত তথ্যের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।” {সূত্র: কম্পিউটার ও আল-কুরআনপৃষ্ঠা ৫৯ ও ৬০ : ডাঃ খন্দকার আবদুল মান্নানএম.বি.বি.এস (ঢাকা)কুরআন-হাদিস রিসার্চ সেন্টার(ফুরফুরা দরবারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান)ইশায়াতে ইসলাম কুতুবখানাদারুস সালামঢাকাবাংলাদেশ।

 

ইসলাম ও পরমাণূবাদ

ﻻﻴﻌﺰﺐﻋﻨﻪﻣﺜﻗﺎﻞﺬﺭﺓﻓﻰﺍﻠﺴﻣﻮﺖﻮﻻﻓﻰﺍﻻﺭﺽﻮﻻﺍﺼﻐﺭﻤﻦﺬﻠﻚﻮﻻﺍﻜﺑﺮﺍﻻﻓﻰﻜﺘﺐﻤﺑﻴﻦ

অর্থঃ তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে পরিজ্ঞাতআকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু যাঁর অগোচর নয়ওর প্রত্যেকটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ।” (সূরাহ্ সাবাআয়াতঃ ৩)।

পবিত্র কুরআনের মতেবিশ্ব জগৎ আদিতে ছিল একটি বিশালকার একক পিন্ডাকৃতির বস্তু-বস্তু-সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অণু পরমাণু বিশিষ্ট গোলক।

(সূত্র: কম্পিউটার ও আল-কুরআনকুরআন-হাদিস রিসার্চ সেন্টারইশায়াতে ইসলাম কুতুবখানাদারুস্ সালামঢাকা)।

 

 “বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীগণ পরমাণুবাদের সমর্থক

(সূত্রঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদাঃ ফতেহ্ আলী মোহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ সিদ্দিকী আল্ কোরাইশীনেদায়ে ইসলামবর্ষঃ ৭৩সংখ্যা-৬মহররম-সফর ১৪৩৫ হিঃ ডিসেম্বর-২০১৩পৃষ্ঠা-৪০)। 

আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আলোকে মহাবিশ্ব তত্ত্ব (Cosmology)

(সূত্রঃ Encyclopedia)

স্থান  সময় এবংএদের অন্তর্ভুক্ত সকল বিষয় নিয়েই মহাবিশ্ব ।। পৃথিবী এবং অন্যান্য সমস্ত  গ্রহ , সূর্য ও অন্যান্য তারা  নক্ষত্রজ্যোতির্বলয় স্থান ও এদের অন্তর্বর্তীস্থ গুপ্ত পদার্থ , ল্যামডা-সিডিএম নকশা   শূণ্যস্থান (মহাকাশ) - যেগুলো এখনও তাত্ত্বিকভাবে অভিজ্ঞাত কিন্তু সরাসরি পর্যবেক্ষিত নয় - এমন সবপদার্থ  শক্তি মিলে যে জগৎ তাকেই বলা হচ্ছে মহাবিশ্ব 

পুরো বিশ্বের আকার অজানা হলেও এর উপাদান ও সৃষ্টিধারা নিয়ে বেশ কয়েকটি hypotheses বিদ্যমান ।[ মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিষয়কে বলেবিশ্বতত্ত্ব দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সুদূরতম প্রান্তের পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক গবেষণায় মনে হয় মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রক্রিয়াই তার সৃষ্টি থেকেই একই ধরণের প্রাকৃতিক নিয়ম  কয়েকটি নির্দিষ্ট ধ্রুবক দ্বারা নির্ধারিত হয়বিগ ব্যাং (Big Bang) তত্ত্ব অনুসারে এর আয়তন ক্রমবর্ধমান। সম্প্রতি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন তত্ত্বে আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের পাশাপাশি আরো অনেক মহাবিশ্ব থাকার অর্থাৎঅনন্ত মহাবিশ্ব থাকার সম্ভাবনা অবশ্যম্ভাবী বলে ধারণা করা হচ্ছে। পবিত্র ইসলাম মতেআল্লাহপাকের সৃষ্টি সত্বায় অন্ততঃ সাত সাতটি মহাকাশ বিদ্যমান যা একটির চেয়ে অপরটি তুলনামূলকভাবে অকল্পনীয়ভাবে বিরাট-বিশাল।

 

 

মহা বিশ্বের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রাচীন কালে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য নানাবিধ বিশ্বতত্ত্বের আশ্রয় নেওয়া হত। পুরাতন গ্রিক দার্শনিকরাই প্রথম এই ধরণের তত্ত্বে গাণিতিক মডেলের সাহায্য নেন এবং পৃথিবী কেন্দ্রিক একটি মহাবিশ্বের ধারণা প্রণয়ন করেন। তাঁদের মডেলে পৃথিবীই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত।

উল্লেখ্যবিশ্বতত্ত্বের ইসলামী ধারণামতেপবিত্র ক্বাবা পৃথিবীর মধ্যস্থলে অবস্থিত। আবার পবিত্র ক্বাবার ঠিক বরাবর উর্ধ্বজগতে অবস্থিত সাত আসমানে বায়তুল মামুর বিদ্যমান।

উদাহরণস্বরূপএকটি পাথরকে যদি সপ্তাকাশে অবস্থিত বায়তুল মামুর থেকে ফেলে দেয়া হলে যত বছরই লাগুক না কেনএকদিন না একদিন ঠিক নিম্নজগতে অবস্থিত পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত মক্বা মুয়াজ্জিমার খানায়ে ক্বাবা বা বায়তুল্লাহ-তে গিয়ে পড়বে।

উল্লেখ্যনিউটনের গতি ও মহাকর্ষ সংক্রান্ত গভীর ধারণা পর্যবেক্ষণের সাথে সৌরকেন্দ্রিক জগতের সামঞ্জস্য নির্ধারণ করে। ধীরে ধীরে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করেন সূর্যের মতই কোটি কোটি তারা দিয়ে এক একটি গ্যালাক্সি গঠিত। কয়েক শত বছর পূর্বে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সমগ্র মহাবিশ্ব মানে শুধুমাত্র আমাদের এই ছায়াপথ গ্যালাক্সিটিই। ১৯২০র দশকে উন্নত দুরবীনের কল্যাণে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করলেন ছায়াপথের বাইরে অন্য গ্যালাক্সিদের। [৭][৮]

সেই কোটি কোটি গ্যালাক্সিদের মধ্যে ছায়াপথের মতই কোটি কোটি তারাদের অবস্থান। সেই সমস্ত গ্যালাক্সিদের থেকে আগত আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে, সেই গ্যালাক্সিগুলি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। [৯] এর সহজতম ব্যাখ্যা হল গ্যালাক্সিদের মধ্যে স্থানের প্রসারণ হচ্ছে এবং প্রতিটি গ্যালাক্সিই অন্য গ্যালাক্সি থেকে দূরে সরছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা হল সুদূর অতীতে সমস্ত গ্যালাক্সিগুলি বা তাদের অন্তর্নিহিত সমস্ত পদার্থই একসাথে খুব ঘন অবস্থায় ছিল এবং কোন এক কালে মহা বিস্ফোরণের ফলে বস্তুসমূহ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই বিস্ফোরণের নাম দেওয়া হল বিগ ব্যাং(Big Bang) 

১৯৬০এর দশকে বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং-এ সৃষ্ট উষ্ণ বিকিরণের শীতল অবশেষের সন্ধান পেলেন।[১০] এই তরঙ্গ বিগ ব্যাং ঘটনার প্রায় ৪,০০০০০ (চার লক্ষ) বছর পরেবস্তু ঘনত্বের হ্রাসের পরমুক্ত হয়েছিল। এই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ মহাবিশ্বের প্রতিটি জায়গাতেই পাওয়া যায়। এক অর্থে বলা যায় এই তরঙ্গ দৃশ্যমান মহাবিশ্বের শেষ প্রান্ত থেকে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করলেন মহাবিশ্বের প্রসারণ ত্বরাণ্বিত হচ্ছে।[১১] 

বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল একটা ভীষণ ঘন ও উষ্ণ দশা থেকে। সেই সময় থেকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ চলেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, শুরুর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই (10-²± সেকেন্ডের মধ্যেই) মহাবিশ্বের অতিস্ফিতী (Inflation) হয়- যা কিনা স্থানের প্রতিটি অংশে প্রায় একই তাপমাত্রা স্থাপন করতে সাহায্য করে।[১২] এই সময়ে সুসম ঘনত্বের মাঝে হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যত গ্যালাক্সি সৃষ্টির বীজ তৈরি হয়। মহাকর্ষ শক্তি মাধ্যমে বস্তুজগতকে আকর্ষিত করে গ্যালাক্সি সৃষ্টির পেছনে কৃষ্ণ বা অন্ধকার বস্তুর(Dark matter) এর বিশেষভূমিকা আছে। অন্যদিকে মহাবিশ্বের বর্তমান প্রসারণের মাত্রার ত্বরণের জন্য কৃষ্ণ বা অন্ধকার শক্তি বলে একটি জিনিসকে দায়ী করা হচ্ছে। বর্তমান মহাবিশ্বের মূল অংশই হচ্ছে কৃষ্ণ শক্তিবাকিটা কৃষ্ণ বস্তু। আমরা চোখে বা ডিটেকটরের মাধ্যমে যা দেখি তা মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশেরও কম।

বর্তমান মহাবিশ্বের উপাদান সমূহ

মহাবিশ্বের আকার বিশাল। বর্তমান বিশ্বতত্ত্বের মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ১৩.৭৫ বিলিয়ন বা ১,৩৭৫ কোটি বছর। এই মহাবিশ্বের দৃশ্যমান অংশের "এই মুহূর্তের" ব্যাস প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোক বছর।  মহাবিশ্বের ব্যাস ১৩.৭৫ x ২ = ২৭.৫০ বিলিয়ন আলোক বছরের চাইতে বেশী। তাছাড়াপৃথিবীকে কেন্দ্র করে মহাবিশ্বকে যদি একটা গোলক কল্পনা করা হয় তবে তার ব্যাসার্ধ হবে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন আলোক বর্ষ। যদিও সেই দূরত্বে অবস্থিত গ্যালাক্সি থেকে এই মুহূর্তে যে বিকিরণ বের হচ্ছে তা আমরা কখনই দেখতে পাব নাজ্যোতির্বিদরা মনে করছেন দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। এই গ্যালাক্সিরা খুব ছোটও হতে পারেযেমন মাত্র ১০ মিলিয়ন (বা ১ কোটি) তারা সম্বলিত বামন গ্যালাক্সি অথবা খুব বড়ও হতে পারেযেমনঃ দৈত্যাকার গ্যালাক্সিগুলিতে ১০০০ বিলিয়ন তারা থাকতে পারে (আমাদের গ্যালাক্সি ছায়াপথের ১০ গুণ বেশী)। দৃশ্যমান মহাবিশ্বে আনুমানিক ৩ x ১০+২৩টি তারা থাকতে পারে।[১৩]

বর্তমানের মহাজাগতিক মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের মূল উপাদান মূলতঃ কৃষ্ণ বা অন্ধকার শক্তি। ধরা হচ্ছে যে এই শক্তি সারা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে এবং মহাবিশ্বের প্রসারণের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করছে। কৃষ্ণ শক্তির পরিমাণ যেখানে ৭৪% ভাগ ধরা হয়মোট বস্তুর পরিমাণ সেখানে ২৬%। কিন্তু এই বস্তুর মধ্যে ২২% কৃষ্ণ বস্তু ও ৪% দৃশ্যমান বস্তু। কৃষ্ণ বস্তুর অস্তিত্ব পরোক্ষভাবে গ্যালাক্সির ঘূর্ণনগ্যালাক্সিপুঞ্জমহাকর্ষীয় লেন্সিংইত্যাদি পর্যবেক্ষণ মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষ্ণ বস্তু যেহেতু মহাকর্ষ ছাড়া অন্য কোন বলের সংঙ্গে পারতপক্ষে কোন মিথষ্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নাসেই জন্য তাকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।

মহাবিশ্বের সংঙ্গে আমাদের পরিচয় দৃশ্যমান বস্তুর আঙ্গিকে। পরমাণু ও পরমাণু দ্বারা গঠিত যৌগ পদার্থ দিয়ে এই দৃশ্যমান বিশ্ব গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত। প্রোটন ও নিউট্রনকে "ব্যারিয়ন" বলা হয়। ব্যারিয়ন তিনটি কোয়ার্ক কণা দিয়ে গঠিত। অন্যদিকে দুটি কোয়ার্ক কণা দিয়ে গঠিত কণাদের "মেজন" বলা হয়। অন্যদিকে লেপটন কণা কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত নয়। সবেচেয়ে পরিচিত লেপটন কণা হচ্ছে ইলেকট্রন। প্রমিত মডেল বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল কোয়ার্কলেপটন ও বিভিন্ন বলের মিথষ্ক্রিয়ায় সাহায্যকারী কণাসমূহ (যেমন ফোটনবোজন ও গ্লুয়ন) দিয়ে তৈরি। বর্তমানের কণা পদার্থবিদ্যাকে ব্যাখ্যা করতে এই মডেল সফল হয়েছে।

মহাবিশ্বের গঠন ও আকার

সূর্য আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র। সূর্য থেকে আলো আসতে ৮ মিনিট মত সময় লাগেকাজেই সূর্যের দূরত্ত্ব হচ্ছে আনুমানিক ৮ আলোক মিনিট। আমাদের সৌর জগতের আকার হচ্ছে ১০ আলোক ঘন্টার মত। সূর্যের পরে আমাদের নিকটবর্তী তারা হচ্ছে ৪ আলোক বর্ষ দূরত্বে। নিচের চিত্রে ১৪ আলোক বর্ষের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত তারাদের দেখানো হয়েছে

আমাদের গ্যালাক্সি-ছায়াপথ

 সূর্য থেকে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৩০,০০০ আলোক বর্ষ। গ্যালাক্সির ব্যাস ১০০,০০০ বা এক লক্ষ আলোক বর্ষ। কেন্দ্রের উল্টোদিকের অংশকে আমরা দেখতে পাই না।

স্থানীয় গ্যালাক্সিপুঞ্জ

 আমাদের ছায়াপথের ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লক্ষ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত স্থানীয় গ্যালাক্সিগুলো। এই স্থানীয় গ্যালাক্সি দলের মধ্যে বড় তিনটি সর্পিল গ্যালাক্সি - ছায়াপথঅ্যান্ড্রোমিডা বা M31 এবং M33 একটি মহাকর্ষীয় ত্রিভুজ তৈরি করেছে। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি আমাদের নিকটবর্তী বড় গ্যালাক্সি। এর দূরত্ব হচ্ছে ২.৫ মিলিয়ন বা ২৫ লক্ষ আলোকবর্ষ। স্থানীয় দলের মধ্যে বেশীর ভাগ গ্যালাক্সিই বড় ম্যাজিল্লান মেঘের মত অনিয়মিত গ্যালাক্সি।

স্থানীয় গ্যালাক্সি মহাপুঞ্জ

স্থানীয় গ্যালাক্সি দল থেকে স্থানীয় গ্যালাক্সি মহাপুঞ্জের অন্যান্য দলের দূরত্ত্ব বিদ্যমান। এই মহাপুঞ্জের কেন্দ্র কন্যা গ্যালাক্সি দল হওয়াতে তাকে কন্যা মহাপুঞ্জ বা মহাদল বলা হয়। কন্যা গ্যালাক্সি পুঞ্জ আমাদের থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বা ৬.৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই ধরণের মহাপুঞ্জগুলো ফিতার আকারের মত। সাবানের বুদবুদ দিয়ে এই ধরণের গ্যালাক্সিপুঞ্জ গঠনের মডেল করা যায়। দুটো বুদবুদের দেওয়াল যেখানে মেশে সেখানেই যেন গ্যালাক্সির ফিতা সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত প্রধান গ্যালাক্সিপুঞ্জ ও গ্যালাক্সি দেওয়াল রয়েছে। কন্যা গ্যালাক্সি মহাপুঞ্জসহ ৫০ মেগাপার্সেকের (৫০ মিলিয়ন পার্সেক বা ১৬৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ)মধ্যে সমস্ত পদার্থ ৬৫ মেগাপার্সেক দূরের গ্যালাক্সি পুঞ্জ Abell 3627এর দিকে ৬০০ কিমি/সেকেন্ডে ছুটে যাচ্ছে।

মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে আরো একধাপ

 

 

মহাজাগতিক ঘর্ষণ বা বিগ ব্যাং-এর পরে মহাকাশ থেকে মাধ্যাকর্ষণের যে তরঙ্গ প্রবাহিত হয়প্রথমবারের মতো তা আবিষ্কৃত হয়েছে৷ এর থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে অনেক অজানা রহস্যের সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা 

   

মহাজাগতিক ঘর্ষণ বা বিগ ব্যাং ঠিক কত বছর আগে হয়েছিলঅর্থাৎমহাবিশ্ব সৃষ্টি ঠিক কত কোটি বছর আগে – এটা নিয়ে আছে নানা জল্পনা-কল্পনা৷হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টারের জ্যোতির্পদার্থবিদরা জানানযে তরঙ্গ প্রবাহের সন্ধান তাঁরা পেয়েছেনতা একটি মাইল ফলক। ১৪শকোটি বছর আগে এই তরঙ্গের উৎপত্তি হয়েছিল বলে জানান তাঁরা৷ এর সাথেআলবার্ট আইনস্টাইনে এক শতকের পুরোনো আপেক্ষিক তত্ত্বের মিল পাওয়া যায় ৷ এ থেকে এই প্রথম ‘কসমিক ইনফ্লেশনবা মহাজাগতিক স্ফীতির সরাসরি তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেল৷ শুধু তাই নয়; এই তত্ত্ব থেকে এ কথা সহজেই বলা যায় যেমহাবিশ্ব ‘চোখের পলক ফেলার সময়ে একশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ বিস্তার লাভ করেছে৷ দক্ষিণ মেরুতে অবস্থানরত বিআইসটেলিস্কোপের সাহায্যে এই আলোক তরঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে৷ধারণা করা হচ্ছেঅন্যান্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত হলে এই গবেষণাটি নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঠানো হবে৷ সময়ের ব্যবধানের সাথে সাথে তরঙ্গগুলোর পরিবর্তনকে বিগ ব্যাং-এর প্রথম কম্পন বলে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা

বৈজ্ঞানিক পরমাণূবাদ

নিউট্রিনো কি?

(بالإنجليزية: (Neutrino): “নিউট্রিনো”(Neutrino)হচ্ছে বৈদ্যুতিক চার্জবিহীন দূর্বল ও সক্রিয় এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র পারমানবিক কণা। ধারণা করা হয়এই ক্ষুদ্র কণা অশুন্য’ (Non-Zeroভরের কণা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সার্ণের গবেষকরা এই নিউট্রিনো আবিস্কারের ঘোষণা করেন। বিজ্ঞানীদের দাবীঃ আবিস্কৃত নিউট্রিনো বর্তমান প্রচলিত সাধারণ আলোক কণা থেকে দ্রুত বেগ সম্পন্ন। উল্লেখ্যবিজ্ঞানী পাউলি উপলদ্ধি করেন যেভরবেগশক্তিকৌণিক ভরবেগ ইত্যাদি নিত্যতা বজায় রাখার জন্য ইলেকট্রনের সাথে আরেকটি খুবই হালকাআধানহীন এবং প্রায় অদৃশ্য কণার উপস্থিতি প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় এই কণাটিরই নাম দেয়া হয় নিউট্রিনো। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো Standard Model (আদর্শ) নামের একটি বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব ।

 এই মডেল অনুসারে মৌলিক কণাগুলো প্রধানতঃ তিন প্রকার যথাঃ কোয়ার্কবোসন ও লেপটন। এর মধ্যে লেপটন দুই প্রকার যথাঃ ইলেকট্রন ও নিউট্রিনো। নিউট্রিনোর ধারণা প্রথম বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন পরমাণুর বেটা ক্ষয়ের বিশ্নেষণ করতে গিয়ে। নিউট্রিনো ও ইলেকট্রন প্রকৃতিতে দুই ভাইয়ের মত। তিন ধরণের ইলেকট্রনের মধ্যে রয়েছে (১) ইলেকট্রন ইলেকট্রন (অথবা শুধুই ইলেকট্রন) (২) মিউ ইলেকট্রন (মিউয়ন) এবং (৩) টাউ ইলেকট্রন (টাউয়ন) এবং এর প্রতিটি ইলেকট্রনের সাথে আছে একটি করে নিউট্রিনো যথাঃ (১) ইলেকট্রন নিউট্রিনো, (২) মিউ নিউট্রিনো

 

নিউট্রিনো আবিস্কারের ইতিকথা

 

প্রজেক্ট অপেরা’ নামের এক বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের অধীনে ইউরোপীয় পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র সাড়া জাগানো নিউট্রিনো আবিস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিউট্রিনো আবিস্কারের ক্ষেত্রে গৃহীত এক পরীক্ষার প্রথম ধাপে সুইজারল্যান্ডের সিনক্রোটোন নামের একটি ভূগর্ভ যন্ত্রে প্রোটন কণা তৈরী করে তা গ্রাফাইটের ওপর নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রোটন কণাগুলি ভেঙে কিছু জটিল কণা তৈরী হয়যেগুলি অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষয় হয়ে মিউয়ন এবং মিউ নিউট্রিনো তৈরী করে। এ কণাগুলিকে তখন লোহার ওপর নিক্ষেপ করা হয়। এতে মিউয়ন নিউট্রিনো বাদে অন্য সব কণা প্রতিফলিত বা শোষিত হয়। মিউয়ন নিউট্রিনোগুলি পৃথিবীর মাটি-পাথর ভেদ করে চলে প্রায় ৭৫০কিলোমিটার দূরে ইতালিতে পৌঁছায়। ই নিউট্রিনো লোহাও ভেদ করে অনায়াসে এপার থেকে ওপারে ছুটে যেতে পারে আলোর গতির চাইতেও বেশী গতিতে। মজার ব্যাপার হলো যেভরবিহীন অর্থাৎ অশুন্য ভরের (Mass-less) অধিকারী আলোর কণাই সাধারণতঃ ভরপূর্ণ পারমানবিক কণার চাইতে দ্রুতগামী হয়ে থাকে। কিন্তু অশুন্য ভরের অধিকারী অর্থাৎ ভরযুক্ত নিউট্রিনো যার গতিবেগ নাকি শুন্য ভরের আলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখানেই বৈজ্ঞানিক জগতের চরম ও পরম বিস্ময়। অপেরা পরীক্ষণের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যেনিউট্রিনোর গতি হলো আলোর গতির ১.০০০০২৫ গুণ অর্থাৎ অন্ততঃ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড বেশী।

 

আইনস্টাইনের আলোক তত্ত্ব বনাম নিউট্রিনোঃ

 

আজ থেকে শতাধিক বছর আগে প্রখ্যাত জার্মান পর্দাথ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর আবিস্কৃত বিখ্যাত সমীকরণ E=MC²(Theory of Special Relativity বা বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব’) এর আলোকে ঘোষণা করেছিলেন যে, “আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু নেই। পক্ষান্তরে Center for European Research of Nuclear (CERN) এর বিজ্ঞানীরা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানকিভাবে এ মর্মে ঘোষণা করে যে, “আলোর গতির চেয়ে নিউট্রিনোর গতি অন্ততঃ ২৫ ন্যানো সেকেন্ড(কোনো কোনো বর্ণনায় ৬০ ন্যানো সেকেন্ড) বেশিসত্যি সার্ণের এই গবেষণালব্ধ আলোর চাইতে গতিশীল নিউট্রিনোর অস্তিত্ব আইনস্টাইনের E= MC²(Theory of Special Relativity) তত্ত্বকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেঅন্যদিকে মিরাজুন্নবী ((সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপলক্ষ্যে বুরাক যোগে মক্কা শরীফ মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা এবং তথা হতে বিশেষ সিঁড়ি (মিরাজ)যোগে প্রথমদ্বিতীয়তৃতীয়চতুর্থ, পঞ্চমষষ্ঠ ও সপ্তম আকাশের শেষ সীমানা সিদরাতুল মুনতাহা এবংতথা হতে দ্রুতগামী রফরফ যোগে ৮ জান্নাতআরশে আ'জীম পর্যন্ত পৌঁছার পর রাতের কিছু অংশের মধ্যেই পুনরায় পৃথিবীতে নেমে আসার জন্য প্রয়োজন বর্তমান বিদ্যমান সাধারণ আলোর গতির চাইতেও অভাবনীয় এবং অকল্পনীয় দ্রুততম গতি সত্বার। এই অতি দ্রুতগতিশীল সত্বার অস্তিত্বের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে আলোর গতির চাইতে অধিক গতিশীল বস্তু কণা নিউট্রিনো আবিস্কারের মধ্য দিয়ে। (সুবহা-নাল্লাহি ওয়াবিহামদিহীসুবহা-নাল্লাহিল আ'জীম)। আবিস্কৃত নিউট্রিনোর মাধ্যমে আমরা আশা করিপবিত্র ইসরামিরাজুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রভৃতি দ্বীন-ধর্ম বিষয়ক ঐতিহাসিকঘটনাবলীর একটা বৈজ্ঞানিক সদুত্তর পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহুল্ আজিজ।

ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।

সার্ণের প্রথম সৃষ্টিতাত্ত্বিক গবেষণার সফল আবিস্কার নিউট্রিনোঃ

১৯০৫ সাল। জার্মানীর জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর ঐতিহাসিক ও সবচেয়ে উচ্চমানের যে তত্ত্ব (theory)বৈজ্ঞানিক জগতে উত্থাপন করে রীতিমত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব সাধন করেছিলেন সে তত্ত্বটিকে বলা হয় theory of special relativity বা বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বে মূল কথা আলোর চেয়ে দ্রুতগতির কোন কিছু এ জগতে নেই। এ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে আছে পদার্থ বিজ্ঞানের অন্য সব তত্ত্ব। তাই আইনস্টাইনের special relativity  তত্ত্বে কোন প্রকার বিপদ বিপর্যয় ঘটলে তাতে বৈশ্বিক গুরুত্বর্পূর্ণ যতসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-সূত্রাবলী ধসে পড়তে পারে-এ আশংকার মধ্যেই সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র CERNকর্তৃক সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ঘোষণা করা হয় আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে চলে "নিউট্রিনো"

 সার্ণের বিজ্ঞানীরা তিন বছর গবেষণার পর এই তথ্য প্রকাশ করে। ফলে সার্ণের বিজ্ঞানীদের এ তথ্য হুমকির মধ্যে ফেলে দেয় বিশ্বখ্যাত সমীকরণ E=MC²আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব। (Theory of Special Relativity) নামক বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত-এই   তত্ত্ব-কে। নিউট্রিনো তত্ত্ব এর মূল কথা মহাশূণ্যে আলোর চেয়েও নিউট্রিনো চলে দ্রুত গতিতে

 

নিউট্রিনো পরীক্ষার নির্ভুলতাঃ

 

    পরীক্ষার নির্ভুলতাঃ নিউট্রিনো প্রচলিত আলোর গতিতে (প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বেগে) ছুটে চলেসুইজারল্যান্ড হতে ইতালিতে আসতে যে সময় লাগত পরীক্ষান্তে দেখা গেছে যেবর্তমান প্রচলিত আলোর গতির চাইতে অন্ততঃ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড (১ ন্যানো সেকেন্ড=১ সেকেন্ডের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ) আগে ইতালিতে নিউট্রিনো পৌঁছে গেছে। উল্লেখ্যযেকোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর বিজ্ঞানীদের প্রথম কাজই হলোপরীক্ষাটির ভুল-ত্রুটি দূর করা। এ ধরণের ভুল-ত্রুটি দূর করার জন্য বিজ্ঞানীরা যা করে থাকেন তা হচ্ছে একই পরীক্ষা বার বার করা। বিভিন্ন কারণে পরীক্ষার ফলাফল অভিন্ন নাও আসতে পারে। তখন একাধিক পরীক্ষার গড় ফলাফল হিসাব করা হয়। সেই সাথে ভুলের আশংকাও হিসাব করা হয়। আলোচ্য অপেরা পরীক্ষায় নিউট্রিনোর গতি পরিমাপ করা হয়েছে কয়েক বছর ব্যাপী অন্ততঃ প্রায় ১৬,০০০ (ষোল হাজার) বার। তারপরও গড় যে ফলাফল পাওয়া গেছেনিউট্রিনোর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশী প্রমাণিত হওয়ায় সার্ণের পরীক্ষকরা তাই সব তথ্য ইন্টারনেটে উন্মুক্ত করে দেন বিশ্ববাসীকে জানান দেয়ার জন্য

 

 

নিউট্রিনো আবিস্কারের বৈজ্ঞানিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

 

আবিস্কৃত "নিউট্রিনো" একেতো ভরযুক্ত অতিপারমানবিক কণা পদার্থ, তার উপর আলবার্ট আইনস্টাইনেরবিশ্বখ্যাত সমীকরণ E=MC²নামকবিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (theory of special relativity)-কে চ্যালেন্জ্ঞ করে অন্ততঃ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড অতিক্রম!

 

বিজ্ঞানীরা যখন শুরুতে নিউট্রিনোর এই ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হন তখন তারা বিশ্বাসই করতে পারেন নি যে, রীতিমত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে আইনস্টাইনেরবিশ্বখ্যাত সমীকরণ ৷ তাই ভুল প্রমাণিত করার জন্য সার্ণের বৈজ্ঞানিকতা সম্ভাব্য সব ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করে বারবার একই পরীক্ষা করতে থাকেন এবং একই ফলাফল পান৷

কিন্তু যেহেতু প্রাপ্ত এই তথ্য পদার্থবিজ্ঞানীদের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাই বিষয়টা নিয়ে যেন বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করেন সেজন্য সার্নের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক সেমিনারে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন৷ আর বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে যেন বিজ্ঞানীরা সহজেই গবেষণাটি দেখতে পারেন সেজন্য একটি ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদনটি রাখা হয়েছে৷

গবেষণা যাচাই

সেমিনারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে সার্নের বিজ্ঞানী দারিওতাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি যাচাই বাছাই করে দেখতে মার্কিন ও জাপানি বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

উল্লেখ্যঅ্যামেরিকার ফার্মিল্যাবও জাপানের টিটুকেনামের দুটি গবেষণা কেন্দ্র একই বিষয় নিয়ে কাজ করছে৷ ফার্মিল্যাবের এক বিজ্ঞানী অধ্যাপক জেনি থোমাস বলছেন সার্নের বিজ্ঞানীদের তথ্য যদি আসলেই সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানে তার প্রভাব হবে অনেক বড়

 

 

 

 

 

 

 

অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মত

 

পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে পরিচিত-বিগ ব্যাং তত্ত্বের স্থপতি সেই স্টিফেন হকিং বলছেন সার্নের গবেষণার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি৷ তিনি বলেন এর জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন৷

 

কসমোলজিস্ট ও অ্যাস্ট্রোফিজিসিষ্ট মার্টিন রিস বলেছেনঅতি আশ্চর্যের কোনো দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সেরকমই কোনো প্রমাণ৷ সার্নের বিজ্ঞানীরা যেটা বলছেন সেটা সেরকমই একটা অতি আশ্চর্যের দাবি বলে মন্তব্য করেন ঐ ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী৷

এই সূত্রে আমরা নিউট্রিনো আবিস্কার সম্পর্কে খুটিনাটি জেনেছি সার্ণে কর্তৃক প্রচারিত তথ্য থেকে। তবে আবিস্কারটি আধুনিক বিজ্ঞানীদের জন্য তাত্ত্বিক সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা-পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জেফ ফোরশাও বলছেনসার্নের গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয় তার মানে হলো আজকের সুপ্রতিষ্ঠিত সব পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রাবলী পাঠিয়ে দেয়া যাবে অতীতে৷ অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেনঃ আমরা কল্পবিজ্ঞানে হরহামেশাই যে টাইম ট্রাভেল'এর কথা পড়ি সেটা সত্যি হবে৷ তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনতার মানে এই নয় যে, আমরা খুব তাড়াতাড়িই টাইম মেশিন বানাতে যাচ্ছি!

উল্লেখ্য, এতকাল বৈজ্ঞানিক রেওয়াজ বা নিয়ম নীতি ছিলঃ আবিস্কৃত বিষয়ের সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ সত্য-সত্যতা যাচাই করা যা নিউট্রিনোর বেলায় ব্যতিক্রম ঘটে তার সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অসত্যতা প্রতিপন্ন করার সার্ণে কর্তৃক উদ্যোগ গ্রহণ স্মরণকালের বিজ্ঞান জগতের অভূতপূর্ব ঘটনা।

যাহোক, সার্ণে কর্তৃকনিউট্রিনো এর পুনরায় গবেষণার সর্বশেষ ফলাফলে জানা গেছেঃ যান্ত্রিক তারের বিচ্ছিন্নতার কারণে আলোর চাইতে নিউট্রিনো-কে বেশী গতি সম্পন্ন দেখা গেছে। এতে আপাততঃ পদার্থ বিদ্যার পাঠ্যবইয়ের নতুন সূত্রে ছাপানোর অহেতুক ঝামেলা হতে বিজ্ঞানীরা মুক্ত হয়েছেন বলা যায়। তবে এতে টাইম ট্রাভেলের (আলোর চাইতে দ্রুত গতি লাভ করে মহাবিশ্বে ঘোরার ভ্রমণ যান) যে আশাবাদ বিশ্বজনমনে সৃষ্টি হয়েছিল তা ম্লান হয়ে গেছে

আমাদের অভিমতঃ নিউট্রিনো সংক্রান্ত সার্ণের গবেষণার চাকা উল্টো পানে ঘোরানোর চাইতে আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিত তত্ত্ব এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করি। সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা এমনকি দিনের যথেষ্ট হেরফের থাকা সত্ত্বেও আমরা যদি আমাদের দেশের স্থানীয়সময়-কে এবং রাষ্ট্রীয় সময়ের সাথে এবং রাষ্ট্রীয় সময়-কেআন্তর্জাতিকভাবে গ্রীনীচমান সময়ের  ইউনিট বা একক (স্ট্যান্ডার্ড) মানের সাথে সমন্বয় করে চলতে পারিকিংবা রাষ্ট্রীয় মুদ্রার বাইরে দর উঠা-নামা সত্ত্বেও যদি মার্কিন ডলার-কে একক আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে গ্রহণ করতে পারি  তাহলে আলোর সাধারণ গতি পৃথিবীতে এবং পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে যতই তারতম্য ঘটুক না কেন? কিংবা আলো সরল রেখায় গমন করে এই তত্ত্ব আমরা কায়মনোবাক্যে গ্রহণ করি যদিও মহাকাশে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কিছুটা বেঁকে যায়; তাই বলে কি আমরা আলোর সরল রেখায় গমন তত্ত্ব কি পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দেব? যদি তা না হয়, কেন আলবার্ট আইনস্টাইনেরবিশ্বখ্যাত সমীকরণ E=MC² নামক বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (theory of special relativity)-কে লোর একক (ইউনিট) মান হিসাবে স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠিত হবো? কেন প্রচলিত পদার্থ বিজ্ঞানের সুপ্রতিষ্ঠিত, প্রমাণিত সূত্র বাতিল হওয়ার শংকায় শংকিত হবো?

 

মাদের প্রস্তাবনাঃউপরোক্ত অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রস্তাবঃ যেহেতু আইনস্টাইনেরবিশ্বখ্যাত সমীকরণ E=MC²নামক বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (theory of special relativity)মতে আলোর সাধারণ গতি প্রতি সেকেন্ডে ,৮৬,২৮২.৩৯৭মাইল এবং যেহেতু সহজ হিসাবের জন্য ফ্যারাকশান ফিগার (ভগ্নাংশ) (গতি) বাদ দিয়ে রাউন্ড ফিগার হিসাবে স্বীকৃত হয় এবং তাতে পদার্থের তাত্ত্বিক কোন ব্যত্যয় না ঘটে সেহেতু আইনস্টাইনেরবিশ্বখ্যাত সমীকরণ E=MC²নামক বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (theory of special relativity)-কে একক আন্তর্জাতিক আলোক মান হিসাবে স্বীকৃতি এবং প্রচলন ঘটাতে পারি

ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।

পৃথিবী এবং এর তার বাইরে মহাকর্ষের প্রভাবে হোক  আইনস্টাইনের ভাষ্য মতেই ১,৮৬,০০০ মাইল ধরা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সার্ণে, ইউনেস্কো থেকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা জারি করা যেতে পারে- যাতে ভবিষ্যত গবেষণায় আলোর গতির চাইতে নিউট্রিনো বা সুপার সেমিটিস বা অন্য কোন ভরশুন্য ফোটন জাতীয় অবস্তু কিংবা ভরপূর্ণ বস্তু-পদার্থ এর গতি বেশী কিংবা কম গতির ধারণা আবিস্কৃত হলেও পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রকে নতুনভাবে প্রকাশের বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না ইনশাআল্লাহ। এমনিতেই খোদ আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিত তত্ত্বঃ E= MC²এর সূত্রমতে আলোর সাধারণ গতি বাস্তবেপ্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,২৮২.৩৯৭ মাইল । এই সংখ্যা ফ্যারাকশান (ভাংতি) হওয়ায় পদার্থ বিদ্যার সূত্র রচনায় জটিলতার আশংকা থাকায়রাউন্ড ফিগার হিসাবে ১,৮৬,০০০ মাইলকে আলোর গতির "একক" (Unit) ধরা হয়েছে।

 

 

নিউট্রিনোর ইসলামী মূল্যায়নঃ

বুরাক’ আরবী বরকুন’ শব্দ থেকে নিস্পন্ন যার অর্থ বিদ্যুৎ (Electric/Current)|। বিদ্যুতের অন্যতম প্রধান ধর্ম হচ্ছে দ্রুত পরিবাহিত হওয়া যার জন্য দ্রুতগতি বুঝাতে বলা হয়ে থাকে বিদ্যুৎ গতি। উল্লেখ্যপ্রথমতঃ পবিত্র মেরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বে পবিত্র মক্কা আল মুয়াজ্জিমা থেকে পবিত্র মসজিদুল আল আকসা পর্যন্ত রাত্রিকালীন মহানবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিভ্রমণকে ইসলামের ইতিহাসে ইসরা’ বলা হয় । ইসরা-তে মহানবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বহনকারী যানের নাম ছিল বুরাক-যাগাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চাইতে ছোট এক অতি দ্রুতগামী"কুদরতি ইলাহি" বাহন।

দ্বিতীয়তঃ পবিত্র মেরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম সংঘটিত হয়েছিল ঐ রাতের দ্বিতীয় পর্যায় মিরাজ বা সিঁড়িযোগে মসজিদুল আল আকসা হতে সাত আসমানের সর্বশেষ সীমানা সিদরাতুল মুনতাহা-এসবই দুনিয়াবী সাধারণ আলোর গতিতে নয়, স্রেফ আল্লাহ পাকের সৃষ্ট অকল্পনীয় কুদরতি গতি সম্পন্ন হয়েছে- যে গতিতে রাণী বিলকিসের সিংহাসন চোখের পলকে বাদশাহ সোলায়মান আলাইহিস্ সালামের নিকট আল্লাহপাকের হুকুমে পৌঁছে গিয়েছিল একইভাবে আখেরাতে নেক্কার বান্দারাও আল্লাহপাকের কুদরতি গতিতেই মুহুর্তের মধ্যে অতি দ্রুততার সাথে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাত বাসী হবেন। আলোর গতির চাইতেও বস্তু বা বস্তু কণার গতি যে বেশি হতে পারেসার্ণে কর্তৃক আলোর চাইতে দ্রুতগতি সম্পন্ন বস্তু কণা "নিউট্রিনো" আবিস্কারে এতে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান এবং মিরাজসহ ইসলামের অন্যান্য গতি বিষয়ক বিষয়াদির বৈজ্ঞানিক সত্যতা স্রেফ আল্লাহ তায়ালার অপর দয়াকরুণামাত্র। তবে জ্ঞাতব্য যে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কিছু বাধা ধরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত, সূত্র, অনুসিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্তের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল পক্ষান্তরে যেহেতু মহান আল্লাহ তায়া'লা "আস স্বমাদ" (সামাদ) অমুখাপেক্ষী অর্থাৎ কোনরূপ তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত, সূত্র, অনুসিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্ত থেকে সুবহা-ন অর্থাৎ পবিত্র, মুক্ত সেহেতু রাতের সামান্য অংশে সৃষ্টির শেষ প্রান্তে যাওয়া এবং ফেরত শুধু একবারই নয়; শত, হাজার, অযুত, লক্ষ, নিযুত কোটি বার এই সামান্য সময়ের মধ্যে কুদরতে ইলাহিয়া'য় সম্পন্ন হওয়া মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।                        

 

ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্বের পথে আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি পরিপ্রেক্ষিতঃহিগস বোসন কণা আবিস্কার

                            বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

وَهُوَ الَّذِىۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ بِالۡحَـقِّ​ؕ وَيَوۡمَ يَقُوۡلُ كُنۡ فَيَكُوۡنُ ؕ قَوۡلُهُ الۡحَـقُّ​ ؕ وَلَهُ الۡمُلۡكُ يَوۡمَ يُنۡفَخُ فِى الصُّوۡرِ​ ؕ عٰلِمُ الۡغَيۡبِ وَ الشَّهَادَةِ​ ؕ 

অর্থঃ “তিনিই যথাবিধি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যখন তিনি বলেন, 'হও' তখনই হয়ে যায়; তাঁর কথাই সত্য; যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই, অদৃশ্য, দৃশ্য সব কিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত, এবং তিন প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আনআম: আয়াত ৭৩, ছহীহ কোরআন শরীফ, মূল: তাফসীর ইবনে কাসীর এবং তাফসীরে আশরাফী, পৃষ্ঠা: ১৪৯,(বঙ্গানুবাদ )

ﻻﻴﻌﺰﺐﻋﻨﻪﻣﺜﻗﺎﻞﺬﺭﺓﻓﻰﺍﻠﺴﻣﻮﺖﻮﻻﻓﻰﺍﻻﺭﺽﻮﻻﺍﺼﻐﺭﻤﻦﺬﻠﻚﻮﻻﺍﻜﺑﺮﺍﻻﻓﻰﻜﺘﺐﻤﺑﻴﻦ

অর্থঃ তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে পরিজ্ঞাতআকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু যাঁর অগোচর নয়ওর প্রত্যেকটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ।” (সূরাহ্ সাবাআয়াতঃ ০৩)

আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব (Modern Creationism)

দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান জীব ও জড় নির্বিশেষে সকল সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকর্তা কে এবং এটি কখন এবং কিভাবে সংঘটিত হছিল-এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তাত্ত্বিক ইতিহাস-কে সৃষ্টিতত্ত্ব (Creationism)বলা হয়। এ বিষয়ে রয়েছে একাধিক তত্ত্ব যথাঃ (ক) আস্তিক্যবাদী সৃষ্টিতত্ত্ব এবং (খ) বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্ব

(ক) আস্তিক্যবাদী সৃষ্টি তত্ত্ব

এই সৃষ্টিতত্ত্ব বিজ্ঞানমনস্ক ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ জ্ঞানী-বিজ্ঞানীদের ধারণা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। আস্তিক্যবাদী এই সৃষ্টি তত্ত্বের নাম ইমানিসনিজম (Emanisnim)|। ইমানিসনিজম’ (মহাবিশ্বের উৎপত্তিসৃষ্টি ও পরিবর্তন সম্পকিত একটি ধারণার নাম। ইংরেজী ‘Emanisnism’শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Emanare’ শব্দ থেকে যার অর্থ To flowfrom...to pour fourth or out ofঅর্থাৎ কোন উৎস হতে বয়ে আসাপ্রবাহিত বা আগতউৎসারিত ইত্যাদি। ইমানিজমের ধারণা-বিশ্বাস হচ্ছেসব সৃষ্টিরসব বস্তুর উদ্ভব হয়েছে First Reality বাFirst Principleবা Perfect Godথেকে। ইমানিশনিজম হচ্ছে Transcendental Principle অর্থাৎ অলৌকিক বা মানুষের জ্ঞানে কুলায় না-এমন একটি বিষয় (Beyond human knowledge: Source: A Student Dictionary)|এই সৃষ্টিতত্ত্ব মতেঃ Nothingথেকে Everythingসৃষ্টি হয়নি বরং অত্যন্ত সূক্ষ্ণদর্শী এবং মহা প্রবল প্রতাপশালী মহাজ্ঞানী একক সৃষ্টিকর্তা-ই সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলিত এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন (সুবহা-নাল্লাহি ওয়াবিহামদিহীসুবহা-নাল্লাহিল আজীম।

ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্ব

আস্তিক্যবাদী সৃষ্টি তত্ত্বের অপর নাম ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্ব। ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্বে মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তাসৃষ্টির পূর্ব অবস্থা এবং পরের অবস্থাপরিবর্তন এবং মহা ধ্বংসতত্ত্ব (কেয়ামত) ইত্যাদি সম্পর্কিত পবিত্র কুরআন ও সহীহ্ সুন্নাহ ভিত্তিক বিশদ বিবরণ রয়েছে।

(খ) বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্ব

বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্বে কেবল মহাবিশ্বের কিভাবে উৎপত্তি ঘটেছে সে সম্পর্কে ধারণামূলক বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব রয়েছে। বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্বের অপর নাম যান্ত্রিক বস্তুবাদ। এ তত্ত্ব মতেবস্তুর যান্ত্রিক ধারায় সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভপরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা ঘটছে। অর্থাৎ যা ঘটেছেঘটছে এবং ঘটবে-সবই বস্তুর যান্ত্রিক ধারার অনিবার্য ফসল (নাউযুবিল্লাহি মিন জালিক)। এ ধরণের ধারণা-বিশ্বাস এক ধরণের নিশ্চয়তাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে যা ঘটবে তা ঘটবেই এবং যা ঘটবে নাতা কখনই ঘটবে না। এ ধরণের বিশ্বাস ইসলামীমতের অপরিবর্তনশীল তকদির” এর সাথে প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ। তবেইসলামী মতে এর অনুঘটক যন্ত্র নয়সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তবে এমন কিছু ঘটনা/বিষয় রয়েছে যা পরিবর্তনশীল এবং আল্লাহপাকের কুদরতি ইচ্ছায় এর পরিবর্তন সাধন হয়ে থাকে অথবা এমন দোয়া-মুনাজাত রয়েছে তা পরিবর্তনশীল তাকদীরের পরিবর্তন ঘটায়। যেমনঃ بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

বাংলা উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-- ইয়া দুররু মাআ'সমিহি শাইয়ুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা--ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউ'ল আ'লিম।[আবু দাউদ:৫০৯০,তিরমিজি: ৩৩৮৮,ইবনে মাজাহ:৩৮৬৯]

(সকাল-বিকাল তিন বার করে পাঠ্য)-এই দোয়ার বরকতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পরিবেশ-প্রতিবেশ বা অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়-যারফলে নিশ্চিত ভয়াবহদূর্ঘটনা সংঘটন ছিল সময়ের ব্যাপারমাত্র।

মহাবিস্ফোরণ (Big Bang)ঘটার পূর্বেকার অবস্থাঃ

Computer simulationএর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যেসর্ম্পূণ নাই/শুন্য/নিল (Nil)/জিরো(Zeroথেকে মহাবিশ্বের মহাসৃষ্টির সূচনার পূর্বে র্অথাৎ মহাবিস্ফোরণ(Big Bangঘটার পূর্বে মহাশক্তিশালী এক প্রকার আলোক শক্তিই বিদ্যমান ছিল-যার বৈজ্ঞানিক নামঃ মহাসূক্ষ্ণ আলোক বিন্দু” (Highest Energetic Radiation)। এতেই সম্মিলিতভাবে(Combinedনিহিত ছিল আজকের আসমান ও যমিন বা পৃথিবী। বিজ্ঞানীদের ধারণাপ্রায় ১৫০০ কোটি থেকে ২০০০ কোটি বৎসর পূর্বে উক্ত মহাসূক্ষ্ণ” বিন্দুটি 10º³e.s.aপর্যায়ে স্থিতি লাভ করেছিল। ১৯৬৫ সালে পশ্চাৎপদ বিকিরণ (Back Ground Radiation)আবিস্কারের ফলে বিজ্ঞান এ সত্য মানব জাতিকে অবগত করাতে সক্ষম হয় যেশুণ্য থেকে সৃষ্ট উক্ত Highest Energetic Radiation নামক মহাআলোক গোলকটি মহাবিস্ফোরণ (Big Bang)এর পূর্বে (১) আলো (২) শক্তি ও (৩) তাপ-এই ত্রিমাত্রিক অবস্থায় বিরাজমান ছিল । এই সময় তাপমাত্রার পরিমাণ ছিল 10³²ডিগ্রি কেলভিন অর্থাৎ ১০,০০০ কোটিকোটিকোটিকোটি ডিগ্রি কেলভিন।

মহাবিস্ফোরণ (big bang)ঘটার পরবর্তী মুহুর্তের অবস্থা

বৈজ্ঞানিক ভাষ্যমতে Highest Energetic Radiation-এ মহাবিস্ফোরণ (big bang) ঘটার পর মুহুর্তে তাপমাত্রা 10³ºkথেকে দ্রুত 10²8-এ নেমে আসে তখন (highest energetic photon)কণিকারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে পদার্থ কণিকা হিসেবে প্রথম বারের মত কোয়ার্ক’ এবং এন্টি কোয়ার্ক এর জন্ম দেয়। অতঃপর তাপমাত্রা যখন আরো নিচে নেমে 10¹³kকেলভিনে দাঁড়ায় তখন কোয়ার্ক এবং এন্টি কোয়ার্কের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয় এর ব্যাপক ধ্বংস সাধন ঘটে এবং অবশিষ্ট থেকে যায় কিছু কোয়ার্ক। এরপর যখন তাপমাত্রা আরো কমে গিয়ে 10¹ºkকেলভিন-এ দাঁড়ায় তখন ৩টি কোয়ার্ক (১টি আপ কোয়ার্ক এবং ২টি ডাউন কোয়ার্ক মিলিত হয়ে প্রোটন কণিকা (Proton Particle)এবং ৩টি কোয়ার্ক (২টি আপ কোয়ার্ক এবং ১টি ডাউন কোয়ার্ক) মিলিত হয়ে নিউট্রন কণিকা (Neutron Particle) সৃষ্টি হতে থাকে। তারপর তাপমাত্রা যখন 10000000000কেলভিন-এ নেমে আসে তখন পরিবেশ আরো অনুকুলে আসায় সৃষ্ট প্রোটন কণিকা ও নিউট্রন কণিকা পরষ্পর মিলিত হয়ে প্রথমবারের মত মহাবিশ্বে এটমিক নিউক্লি গঠিত হতে থাকে। এরপর তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে 1000000000 কেলভিন তখন এটমিক নিউক্লি মহাবিশ্বে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছুটে চলা ইলেকট্রনিক কণিকাকে (Electronic Particle)চর্তুদিকের কক্ষপথে ধারণ করে। ফলে প্রথমবারের মত অণু'র (atoms)সৃষ্টি হয়। আরও পরে যখন তাপমাত্রা ,০০০ কেলভিনে উপনীত হয় তখন মহাবিশ্বের মূল সংগঠন গ্যালাক্সি (Galaxy) সৃষ্টি হতে থাকে। পরবর্তীতে এর ভেতর নক্ষত্রগ্রহউপগ্রহ ইত্যাদি সৃষ্টি হতে থাকে। অতঃপর তাপমাত্রা যখন আরো নিম্নগামী হয়ে মাত্র ৩ কেলভিনে নেমে আসে তখন সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পৃথিবীতে গাছ-পালাজীব-জন্তু ও প্রাণের ব্যাপক সমাবেশ সমাগম ঘটতে থাকে-এই হচ্ছে ২০১২ সালের ৪ঠা জুলাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের আধুনিক বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্বের ইতিকথা।

আধুনিক বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্বের ইতিকথাঃ

 গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস ঈসাব্দপূর্ব ৪০০ অব্দে সর্বপ্রথম পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা’ (atom)নিয়ে মতবাদ পোষণ করেন। অ্যাটোমাস’ (atomas)শব্দ থেকে এটম (atom) শব্দটির বুৎপত্তি যার অর্থ অবিভাজ্য। অ্যারিষ্টটলের মতেপদার্থসমূহ নিরবচ্ছিন্ন (continuous)একে যতই ভাঙ্গা হোক না কেনপদার্থের কণাগুলো ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হতে থাকবে। বিজ্ঞানী রাদার ফোর্ড তার পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে বলেন যেপরমাণু হলো ধনাত্মক আধান ও ভর একটি ক্ষুদ্র জায়গায় আবদ্ধ। তিনি এর নাম দেন নিউক্লিয়াস। প্রোটন ও ইলেকট্রন নিয়ে গঠিত হয় পরমাণু কেন্দ্র-এই কেন্দ্রকে বলা হয় নিউক্লিয়ার্স। নিউক্লিয়ার্স এর চার পাশে ঘুরতে থাকে পরমাণুর ইলেকট্রন।

সৃষ্টি তত্ত্ব বিষয়ক STANDARD MODEL

পদার্থ বিদ্যার যে তত্ত্বটির সাহায্যে কোন বস্তুর ভরের ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয় তাকে ষ্ট্যান্ডার্ড মডেল” (Standard Model)বলা হয়। এই ষ্ট্যান্ডার্ড মডেলটি অস্তিত্বশীল হতে হলে প্রয়োজন পড়ে এমন এক অতি পারমাণবিক কণা- যার বৈজ্ঞানিক নাম হিগস-বোসন কণা” বা God’s particle। পদার্থ বিদ্যার এই ষ্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারেমহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর ভর সৃষ্টির প্রাথমিক ভিত্তি হচ্ছে একটি অদৃশ্য কণা। বস্তুর ভরের মধ্যে ভিন্নতার কারণও এই অদৃশ্য কণাটিই। পদার্থের ভর কিভাবে তৈরি হয় তা জানতে ১৯৬৪ সাল থেকে শুরু হয় গবেষণা। ২০০১ সালে এসে গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মিল্যাবের "টেভাট্টন" নামক যন্ত্ররে মাধ্যমে ওই কণার খোঁজ করতে শুরু করেন। এ কণার খোঁজে ২০০৮ সালে প্রতিযোগিতায় নামেন CERNএর খ্যাতনামা গবেষকরা। ২০১১ সালে CERNএর বিজ্ঞানীরা এ কণার প্রাথমিক অস্তিত্ব টের পান।

বস্তু/পদার্থ এলো কি করে?

বৈজ্ঞানিক গবেষণামতেমহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং পরবর্তী সদ্য সৃষ্ট মহাবিশ্ব যখন একটু শীতল হলোতখন সেখানে সৃষ্টি হয় অদৃশ্য এক ধরণের বল -যাকে বলা হয় হিগস ফিল্ড (Higgs Field)|হিগস ফিল্ডে তৈরী হয় অসংখ্য ক্ষুদে কণা। এই হিগস ফিল্ড দিয়ে ছুটে যাওয়া সব কণা হিগস-বোসনের সংস্পর্শে এসে ভরপ্রাপ্ত হয়। ভরপ্রাপ্ত এই কণা-কে বলা হয় বস্তু বা পদার্থ (Matter)

হিগস বোসন কণা কী ?

A subatomic particle called the Higgs Boson Particle or “God’s particle”.

অর্থঃ অতি পারমানবিক কণাকে হিগস-বোসন কণা বলা হয়।

বিগ ব্যাং বা মহাবিষ্ফোরণ পরবর্তী অবস্থায় কি কি সৃষ্টি হতে পারে তা আলবার্ট আইনেস্টাইন দিব্যি উপলদ্ধি করতেন। এ উপলদ্ধিতেই নিহিত ছিল আজকের সাড়া জাগানো  হিগস বোসন” নামক আবিস্কৃতঅতিপারমানবিক কণাটি

 

 

 

 

হিগস-বোসন কণার তাত্ত্বিক ধারক

বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট” তত্ত্বের ইতিকথা

সত্যেন্দ্রনাথ বসুঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বাংলাদেশ

স্যার জগদিশ চন্দ্র বসু যেমন বেতার যন্ত্র আবিস্কারের স্থপতিতেমন হিগস বোসন বা অতিপারমানবিক কণার অস্তিত্বের ধারণার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বাংলাদেশ এর পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন অন্যতম পথিকৃত এবং অপর জন হচ্ছেন জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনেস্টাইন। উভয়ের যৌথ গবেষণার ফলাফল-কে বলা হয় বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট”-যার উপর ভিত্তিশীল আজকের হিগস-বোসন বা গড'স পার্টিকেল। উল্লেখ্যপদার্থ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু নামের শেষাংশ বসু এরপরিবর্তিত নামটি হচ্ছে বোসন। বস্তুতঃ বোস-আইনস্টাইন ছিলেন হিগস বোসন কণার তাত্ত্বিক স্থপতি- যার প্রাতিষ্ঠানিক রূপকার হচ্ছেন আরেক পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক পিটার হিগস। এ কারণে আবিস্কৃত অতিপারমানবিক কণার হিগস” নামকরণ এবং নোবেল পুরস্কারের অধিকারী হন মিঃ হিগস।

আলবার্ট আইনস্টাইনজার্মানীঃ

১৮৭৯ সালে জার্মানীর উলম’ নামক শহরে আলবার্ট আইনেস্টাইনের জন্ম। আব্বার নাম হেরম্যান আইনেস্টাইন। কাজের অবসর সময়ে ২৬ বছর বয়সে তিনি স্থানসময়বস্তুমহাকর্ষ ও আলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে গিয়ে ১৯০৫ সালে তিনি সময়” (টাইম ডিলেশন) সম্পর্কে এক যুগান্তকরী প্রবন্ধ প্রকাশ করেন-যার নাম বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব” (Special theory of relativity)। উক্ত প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন যেসময় (টাইম) একেক জনের জন্য একেক অবস্থানে বিদ্যমান।এর পর আরো একটি গবেষণালদ্ধ প্রবন্ধে তিনি মত প্রকাশ করেন যে, Mass & Energy are rebound up with one another.অর্থাৎ পদার্থ এবং শক্তি পৃথক নয় বরং অভিন্ন।

হিগস-বোসন কণা আবিস্কারের ইতিকথাঃ

হিগস্-বোসন” নামক কণাটি বিজ্ঞানীদের কাছে একটি হাই-পোসেটিক্যাল” কণিকা হিসেবে বিবেচিত ছিল। পদার্থ বিজ্ঞানের বিশেষ থিওরী Standard Modelথেকে বিজ্ঞানীরা এ কণা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পান। সাধারণতঃ হিগস-বোসনের ভর ১২৫ থেকে ১২৬ এবং এ কণিকার স্পিন হচ্ছে শূণ্য। হিগস-বোসন কণাকে বলা হয় সুপার সিমেট্রিক (super cemetric)) পদার্থ যা-সৃষ্টির শুরুর সময়কার প্রাথমিক কণিকা বিবেচিত।

অধ্যাপক পিটার হিগস কর্তৃক বস্তু/পর্দাথের ভরের উৎস সর্ম্পকে হিগস-বোসন কণার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

হিগস-বোসনের অচিন্ত্যনীয় গুরুত্বভূমিকা ও অবদান এবং এর সন্ধানে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা অংশ হিসাবে ১৯৬৪ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার হিগস বস্তু/পর্দাথরে ভরের উৎস হিসেবে হিগস-বোসনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেনআমরা একটা আঠালো ব্যাক গ্রাউন্ড ক্ষেত্রের কথা ভাবতে পারি। কণাগুলো এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ভরপ্রাপ্ত হয়। অবশ্য এর পিছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে একটি ঘটক যে প্রক্রিয়ায় হিগস-বোসন কণার অস্তিত্ব প্রমাণিত| হকণা’ (PARTICLE)সম্পর্কিত গাণিতিক মডেলের (Mathematical Model) সূত্রমতেউচ্চ গতিতে প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের আন্তঃসংঘর্ষ ঘটানো হলে বেশ কিছু মৌলিক কণা উৎপন্ন হয়। সেমতে, CERN এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যন্ত্রে উচ্চ গতিতে প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের আন্তঃসংঘর্ষ ঘটিয়ে বেশ কিছু মৌলিক কণা উৎপাদন করা হয় উৎপাদিত এই মৌলিক কণা-কে বলা হয় হিগস্-বোসন” কণা।|

হিগস-বোসন কণা আবিস্কারের ইতিকথাঃ

হিগস্-বোসন” নামক কণাটি বিজ্ঞানীদের কাছে একটি হাই-পোসেটিক্যাল” কণিকা হিসেবে বিবেচিত ছিল। পদার্থ বিজ্ঞানের বিশেষ থিওরী standard model থেকে বিজ্ঞানীরা এ কণা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পান। সাধারণতঃ হিগস-বোসনের ভর ১২৫ থেকে ১২৬ এবং এ কণিকার স্পিন হচ্ছে শূণ্য। হিগস-বোসন কণাকে বলা হয় সুপার সিমেট্রিক (super cemetery)) পদার্থ যা-সৃষ্টির শুরুর সময়কার প্রাথমিক কণিকা বিবেচিত।

অধ্যাপক পিটার হিগস কর্তৃক বস্তু/পর্দাথরে ভরের উৎস সর্ম্পকে হিগস-বোসন কণার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

হিগস-বোসনের অচিন্ত্যনীয় গুরুত্বভূমিকা ও অবদান এবং এর সন্ধানে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা অংশ হিসাবে ১৯৬৪ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার হিগস বস্তু/পর্দাথরে ভরের উৎস হিসেবে হিগস-বোসনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেনআমরা একটা আঠালো ব্যাক গ্রাউন্ড ক্ষেত্রের কথা ভাবতে পারি। কণাগুলো এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ভরপ্রাপ্ত হয়। অবশ্য এর পিছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে একটি অনুঘটক।

যে প্রক্রিয়ায় হিগস-বোসন কণার অস্তিত্ব প্রমাণিত হলো

কণা’ (PARTICLEসম্পর্কিত গাণিতিক মডেলের (Mathematical Model)  সূত্রমতেউচ্চ গতিতে প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের আন্তঃসংঘর্ষ ঘটানো হলে বেশ কিছু মৌলিক কণা উৎপন্ন হয়। সেমতেCERNএর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যন্ত্রে উচ্চ গতিতে প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের আন্তঃসংঘর্ষ ঘটিয়ে বেশ কিছু মৌলিক কণা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত এই মৌলিক কণা-কে বলা হয় হিগস্-বোসন” কণা।

হিগস-বোসন কণা'র অস্তিত্ব প্রমাণে CERNএর বিপুল আয়োজন !

পদার্থবিদরা বিশ্বাস করেন যেরহস্যময় হিগস-বোসনের সঙ্গে সংঘর্ষে বিভিন্ন মাত্রার ভরের (Massজন্ম হয়। পদার্থ বিজ্ঞানের এ সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্নকে সামনে রেখে ১৯৭১ সাল থেকে কণাত্বরণ যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে এ বিষয়ে বাস্তব প্রমাণের উদ্যোগ নেয়া হয় । তবে ২০০৮ সাল থেকে এই কলাইডারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।বিপুল শক্তিসম্পন্ন অতি পারমাণবিক কণার জন্ম-তত্ত্ব আবিস্কার করতে CERNআয়োজন করেছিল বিশাল আকারের মহাপরিকল্পনা। এই পরীক্ষা মানব ইতিহাসে শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয় বহুলও বটে। অতি পারমাণবিক কণার জন্ম-তত্ত্ব গবেষণার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল তৎকালীন প্রায় ৫০০ কোটি পাউন্ড এবং তাতে উপস্থাপিত হয়েছে অন্ততঃ ৬০,০০০ (ষাট হাজার) অত্যাধুনিক কম্পিউটার ।

হিগস-বোসন কণার নির্ভুল অস্তিত্বপ্রমাণে CERN এর সর্বোচ্চ সর্তকতা

বস্তু-পদার্থজাত বিশ্ব সৃষ্টির নির্ভুল ও অভিন্ন রহস্য বা উৎসমূল আবিস্কারের মহৎ লক্ষ্যে আজিকার বিশ্বের খ্যাতনামা সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রে CERNকর্তৃক বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের-কে যথাক্রমে (১)Atoroidal lhc apparatus (atlas) এবং (২) Compact muon solenoid (cms) নামক দু'টি দলে বিভক্ত করা হয়। সর্ম্পূণ পৃথক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় একদল-কে জেনেভা এবং অপর দল-কে লন্ডনে নিয়োজিত করা হয়েছিল-যাতে উভয় দল একে অপরের কার্যক্রম সর্ম্পকে বিন্দুমাত্র অবহতি না হতে পারে। উদ্দেশ্য: নির্ভুলভাবে অভিন্ন ফলাফল লাভ। অবশেষে উভয় দল বিশাল দূরত্বে (জেনেভা হতে লন্ডন) অবস্থান করে কোন প্রকার পূর্ব যোগাযোগ ব্যতিরেকেই হিগস-বোসন অতিপারমানবিক কণা প্রাপ্তির বিষয়ে একই সঙ্গে একই ফলাফলে উপনীত হয়।  যার ফলে  CERNকর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের ৪ঠা জুলাইবুধবার এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মলেনে বিশ্ববাসীকে এ মর্মে বিজ্ঞাপিত করে যেস্ট্যান্ডার্ড মডেলের স্বীকৃত ১২তম হিগস-বোসন নামক বহুল প্রত্যাশিত মৌলিক কণারটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

সংক্ষিপ্ত সের্ণ (CERNপরিচিতি

অর্গানিজাসিওঁ ওরোপেএন পুর লা রেশের্শে ন্যুক্লেয়্যর (ফরাসি: Organisation européenne pour la recherche nucléaire;ইংরেজি ভাষায়: European Organization for Nuclear Research)যা সের্ন নামে বেশি পরিচিত জেনেভা শহরের পশ্চিমে ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড-এর মধ্যকার সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ কণা পদার্থবিজ্ঞান (Particle Physics)গবেষণাগার। ইন্টারনেট জগতের বিস্ময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এর পীঠস্থান হিসাবেও এর পরিচিতি রয়েছেসের্ণ (CERN)সংস্থাটি১৯৫৪ এর সেপ্টেম্বর ২৯ তারিখে  অনুষ্ঠিত এক সভায় সের্ন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি স্বাক্ষরিত হয়। প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের সংখ্যা শুরুতে মাত্র ১২ থাকলেও বর্তমানে এই সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়ে ২০-এ দাঁড়িয়েছে

সের্ন-এর আদি নাম ফরাসি "কোঁসেই ওরোপেয়ঁ পুর লা রেশের্শে ন্যুক্লেয়্যার" (Conseil Européen pour la Recherche Nucléaire)-এর আদ্যক্ষর চতুষ্টয়c, e, r,ও nথেকেই CERNবা সের্ন নামের উৎপত্তি।

সের্ন এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহ

বর্ণার্থ:

 

নীল: প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যসমূহ

সবুজ: সের্ন এ পরে যোগদানকারী সদস্যসমূহ

শুরুতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে:

 

 

প্রতিষ্ঠাকালীন (নীল) সদস্যসমূহঃ

 

১. বেলজিয়াম ২.ডেনমার্ক ৩. জার্মানি (পরবর্তিতে পশ্চিম জার্মানি) ৪. ফ্রান্স ৫.গ্রিস  ৫. ইতালি ৬. নরওয়ে, ৭. সুইডেন, ৮. সুইজারল্যান্ড, ৯. নেদারল্যান্ডস, ১০.যুক্তরাজ্য এবং ১১. যুগোস্লাভিয়া

 

 

পরে যোগদানকারী (সবুজ) সদস্যসমূহঃ

 

অস্ট্রিয়া ১৯৫৯ সালে যোগদান করে, যুগোস্লাভিয়া ১৯৬১ সালে পদত্যাগ করে

স্পেন ১৯৬১ সালে যোগদান করে,১৯৬৯ সালে পদত্যাগ করে এবং ১৯৮৩ সালে পুনরায় যোগদান করে, পর্তুগাল ১৯৮৫ সালে, ফিনল্যান্ড ১৯৯১ সালে, পোল্যান্ড ১৯৯১ সালে, হাঙ্গেরি ১৯৯২ সালে, চেক প্রজাতন্ত্র ১৯৯৩ সালে স্লোভাকিয়া ১৯৯৩ সালে বুলগেরিয়া ১৯৯৯ সালে যোগদান করে

 

সার্ণের পর্যবেক্ষক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র সমূহঃ

 

তাছাড়া ৮টি দেশের (আন্তর্জাতিক সংস্থা অথবা দেশসমূহ) রয়েছে সার্ণে "পর্যবেক্ষক মর্যাদা"। দেশসমূহ হলোঃ ইউএসএ, ইউরোপিয়ান কমিশনভারতইস্রায়েলজাপানরাশিয়া,  ইউনেস্কো এবং মুসলিম দেশ তুরস্ক, । (সৌজন্যেঃ উইকিপিডিয়া)

 নতুন বিশ্বায়নের পথে সার্ণে?

এবার সুপারসিমেট্রিক কণা!

ইউরোপীয় পারমানবিক গবেষণা সংস্থা (সার্ণে) গত ফেব্রুয়ারী-২০১৫ মাসে হিগস-বোসন কণার চাইতেও আলোড়ন সৃষ্টিকারী সুপার সিমেট্রিক’ নামক নতুন কণার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করে। মার্চ/২০১৫ মাসে একটি আপ-গ্রেডের পর এর মূল যন্ত্র লার্জ হাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি) আগের তুলনায় অধিক শক্তি নিয়ে সুপার সিমেট্রিক’ এর ব্যাপারে পূর্ণোদমে কাজ শুরু করার কথা। আশা করা হচ্ছেসুপার সিমেট্রিক কণা সত্যিকারভাবে সনাক্ত করা গেলে বিজ্ঞানীরা সরাসরি ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে মহাবিশ্বের অজানা রহস্যগুলিরসমাধানে গবেষকরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। এ প্রসঙ্গেAmerican Association for the Advancement of Science, University of California-Barkley এর এক গবেষক জানানগত শতাব্দীর শুরুতে এন্টিম্যাটার খুঁজে পাওয়ার মতো তারা নতুন এক দুনিয়া পেতে যাচ্ছেন। আর তা পেতে পারে হিগস-বোসন কণার চাইতেও চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী সুপার সিমেট্রিক ম্যাটার আবিস্কারের মধ্য দিয়ে

এবার গবেষণা হোক কবর জিন্দেগীর অজানা কথা!

 প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে-এ হচ্ছে আল্লাহ পাকের সৃষ্টি তত্তের চিরন্তন বিধান। এতে অবিশ্বাসীরাও বিশ্বাস করে থাকে শুধু তা-ই নয়বাপ-দাদার মতো তারাও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে প্রমাণ করে থাকে এর সত্যতা। এতকাল এতদিন মাটির উপরের যতসব গবেষণা। এতে আসমান জমিনের আগে কি ছিল তারও হদিস বিজ্ঞানীরা লাভ করেছেন। এর আগে কে ছিলেন-শুধু এইটুকুন জানলেই আশা করা যায়,  মানবজাতির সত্য থেকে সত্যান্তর পেরিয়ে মহাসত্যে পৌঁছার প্রাণান্তকর প্রয়াস প্রচেষ্টার চির অবসান সম্ভবপর হতে পারে ইনশা আল্লাহুল আজীজ। এর পর জরুরী হচ্ছেমাটির নীচের জিন্দেগীর অবস্হা সম্পর্কে গবেষণা।অবশ্যবিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নতুন দুনিয়ার নতুন সংবাদ এর ঘোষণা দিয়েছে ফ্রন্টিয়ার সায়েন্সের নামে। আশা করিএতে মৃত্যুর পর আখেরী জিন্দেগীর অর্থাৎ কবর জিন্দেগীর স্বরূপ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণার সূচনা ঘটবে। সৎ ব্যক্তির জীবনকাল আর অসৎ ব্যক্তির কবর                                                     জীবনকাল কেমনআত্মীয়-স্বজনের দোয়া-দরুদ বখশিসদান সদকার প্রভাব মৃত ব্যক্তির কবর জিন্দেগীতে এর প্রভাব কেমনএ ধরনের প্রশ্নের জন্য কবর জিন্দেগীর বৈজ্ঞানিক মোরাকাবা জরুরী। জীবৎকালে পান্জেগানা নামাযে আয়াতুল কুরছি পাঠকারীর কবরের জিন্দেগী কেমনএসব প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন সময়ের দাবী বটে।

পরকালীন জীবন সম্পর্কে সন্দেহবাদী অবিশ্বাসীদের ধারণা-বিশ্বাস এবং তার প্রতিকারঃ

আল কুরআনের আলোকে

পরকালীন জীবন সম্পর্কে সন্দেহবাদী অবিশ্বাসীদের প্রশ্নঃ

সে বলেকে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে- যখন সেগুলো পঁচে গলে যাবে? (সূরাহ্ ইয়া-সী-নআয়াত ৭৮)

 

 

 

সন্দেহবাদী অবিশ্বাসীদের এ প্রশ্নের জবাবে স্বয়ং আল্লাহপাক ফরমানঃ

 “বলুন (আয় আমার পেয়ারা হাবীব)যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেনতিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্ব প্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সূরাহ্ ইয়া-সী-নআয়াত ৭৮-৭৯)

এ মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃজন করেছিএতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব।। (সূরা ত্বহাআয়াত-৫৫)

এবং এ কারণে যেকেয়ামত অবশ্যম্ভাবীএতে সন্দেহ নেই এবং এ কারণে যেকবরে যারা আছেআল্লাহ তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন(সূরা হাজ্জআয়াত-০৭: পবিত্র কোরআনুল করীমমূলঃ তাফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন)

মানুষ কি মনে করে যেআমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করবো নাপরন্ত্ত আমি তার আংগুলগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম” (সূরাহ্ আল ক্বেয়ামাহ্-আয়াত-৩-৪) 

আল হাদীসের আলোকে

 “মানুষের দেহের সবকিছু জরাজীর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু নিতম্বের শেষ হাঁড় (ত্রিকোণাস্থিত) নষ্ট হয় না। মানুষকে তার সাথে বিন্যাস করা হবে। এরপর আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ফলে মানুষ উদ্ভিদের মতো গজিয়ে উঠবে। (বুখারীমুসলিম-রিয়াদুস্ সালেহীনহাদিস নং-১৮৩৬৪র্থ খন্ড)। 

  লক্ষ্যণীয় যেপুরাতন কবরে খালি চোখে কখনও শত-সহস্র বছর পূর্বেকার মৃতদেহের কোন প্রকার চিহ্ন থাকার কথা নয়-এমনকি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও যা দেখা বা উপলদ্ধি করা সম্ভব নয় বরং মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সব কিছুই মাটিতে একেবারে একাকার হয়ে যাওয়ারই কথা। এমনতর অবস্থাতেও  হাঁড়জাত মানব দেহের অতি পারমানবিক কণারক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রসূক্ষ্ণাতি সূক্ষ্ণ অস্তিত্ত্বের ঘোষণা রয়েছে পবিত্র হাদিসে বর্ণিত উস্ উস” শব্দে। পবিত্র হাদীসটি- নিম্নরূপঃ

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনআদম সন্তানের শরীরে এমন একটি অস্থি আছে- যেটি মাটিতে কখনো মিশে যাবে না। (প্রশ্ন করা হলো) হে আল্লাহর রসূল! এটি কী তিনি বললেনঃ এটি হলো "উস্উস্"(অস্থি-Coccyx)” (বুখারীআল নাসায়ীআবু দাউদইবনে মাজাহমুসনাদ এবং মুয়াত্তা হাদীস)

উল্লেখ্যমানব দেহের নার্ভাস সিস্টেমের প্রান্ত ধারক হিসাবে অস্থি বা ত্রিকোণাস্থিতির গুরুত্ব রয়েছেএখানে যে প্লেয়াক্স রয়েছে তাকে বলা হয়মূলাধার"।(সূত্রঃ বিজ্ঞানসনাতন ধর্মবিশ্বসভ্যতা-৪র্থ অধ্যায়ঃ গোবর্দ্ধন গোপালদাসভারতসূত্রঃ সাপ্তাহিক সোনার বাংলা।

পরীক্ষান্তে দেখা যাো যেনারীর ডিম্বকোষের (Ovaryসাথে পুরুষের শুক্রকীটের(Sperm নিষিক্ত হওয়ার মাত্র ২(দুই) সপ্তাহ পরে "উস্উস্" নামক শক্ত হাঁড়ের জন্ম হয়। য় সপ্তাহেরের পর এই হাঁড় থেকে একটি লম্বা দন্ড তৈরী হয় তা পরবর্তীতে মেরুদন্ডের হাঁড় তৈরী করে এবং ধীরে ধরে পূর্ণাঙ্গ মানব দেহ তৈরী হতে থাকে। ১৫ দিবসে ভ্রুণের পৃষ্ঠদেশে এর প্রাথমিক গুণাগুণ বা ধর্ম পরিলক্ষিত হয় একটি নির্দিষ্ট প্রান্তে-যার নাম প্রাথমিক সংযোগস্থল। যেদিকে প্রাথমিক গুণাগুণ/ধর্ম প্রকাশিত হয় তাকে বলা হয়ভ্রণের পৃষ্ঠদেশ। প্রাথমিক গুণাগুণ এবং সংযোগস্থল থেকে যে সকল ভ্রুণ কোষ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ  গঠিত হয় তানিম্নরূপঃ

(১) Ectoderm (ভ্রুণের বহিরাবরণ): কেন্দ্রীয় পেশী ও চর্ম দ্বারা গঠিত।

(২ Mesoderm (ভ্রুণের মধ্যকরণ): পাচনতন্ত্র গঠনে মন্থন পেশীকংকালতন্ত্রের পেশীসংবহনতন্ত্রহৃদযন্ত্রঅস্থিপ্রজনন এবং মূত্রতন্ত্র গঠন(মূত্রাশয় ব্যতিত)ত্বকনিম্নস্হিত কোষনাসিকাতন্ত্রপ্লীহা এবং মূত্রগ্রন্থি এ পর্যায়ে গঠিত হয়।

(৩) Endoderm: পাচনতন্ত্রের সীমারেখাশ্বসনতন্ত্রপাচনতন্ত্র সম্পর্কিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (যকৃত ও অগ্ন্যাশয় ব্যতীত)মূত্রাশয়স্বরতন্ত্র ইত্যাদি এ পর্যায়ে গঠিত হয়। তারপর প্রাথমিক গুণাগুণ/ধর্ম এবং সংযোগস্থল নিতম্বের ত্রিকোণাকার অস্থি এলাকায় অবস্থান করে মেরুদন্ডের শেষে যাতে উস্উস্ Coccyx গঠিত হয়।

উল্লেখ্যকবরস্থ হওয়ার পর শত-সহস্র-লক্ষ-কোটি বছর অতিক্রান্ত হলেও অস্থি বা উস্উস্ (Coccyx) এর ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রসূক্ষ্ণাতি সূক্ষ্ণ হাঁড়জাত মানব দেহের এই অতি পারমানবিক কণার অস্তিত্ত্ব থেকেই যাবে।এ কারণে বিজ্ঞানীদের নিঃসংকোচ স্বীকারোক্তিঃ বিজ্ঞানীরা মৌলিকআদিআসল বা অকৃত্রিমভাবে ক্ষুদ্র-বৃহৎ বস্তু না পারেন সৃষ্টি করতেনা পারেন সমূলে বিনাশ করতে

 প্রসংগত উল্লেখ্যপ্রাথমিক গুণাগুণ এবং সংযোগস্হল থেকে ভ্রুণ গঠিত হওয়ার পর সেগুলি মেরুদন্ডের সর্বশেষ অস্থিতে অবস্থান করে এবং তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করে। সুতরাংএতে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান যেত্রিকোণস্থিত ধারণ করে মূল কোষসমূহ-যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র হাদীসে বর্ণিত উস্উস্ থেকে কিয়ামতে মানবজাতির পুনরুত্থান সম্পর্কে প্রমাণ বহন করে। "উস্উস্"(অস্থি- Coccyxথেকে মানব জাতিকে পুনরায় সৃষ্টি করা সম্ভব যা প্রাথমিক গুণাগুণ/বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তাই "উস্উস্"(অস্থি- Coccyx)ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারেগবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যেভ্রুণকোষ গঠন এবং উৎপত্তি প্রাথমিক গুণাগুণ এবং সংযোগস্থল দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এগুলি গঠনের পূর্বে কোন কোষ (সেল) বিভাজিত হতে পারে না। যে সব গবেষকরা এটা প্রমাণ করেছেন তাঁদের অন্যতম একজন হলেন জার্মান বিজ্ঞানী হ্যান্স স্পিম্যান। প্রাথমিক গুণাগুণ এবং সংযোগস্থল এর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি দেখলেন যেএগুলিই হচ্ছে ভ্রুণ গঠনকারী মৌলিক উপাদান। তাই তিনি এদের নাম দিলেন প্রাইমারী সংগঠক। ১৯৩১ সালে হ্যান্স স্পিম্যান প্রাথমিক সংগঠনটি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলেন । ১৯৩৩ সালে এটিকে সিদ্ধ (বয়েলড) করে দেখলেন যেএতে কোষের কোনরূপ ক্ষতি হলো না বরং এ থেকে ২য় ভ্রুণ জন্মালো। ১৯৩৫ সালে হ্যান্স স্পিম্যান প্রাথমিক সংগঠক আবিস্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

 উল্লেখ্যডঃ ওসমান আল জিলানী এবং শেখ আবদ-আল মাজিদ আজানদানি ১৪২৩ হিজরী সালের মাহে রমাদানে "উস্উস্"(অস্থি-Coccyxএর ওপর ব্যাপক গবেষণা চালান। ৫টি "উস্উস্"(অস্থি-Coccyx)এর ২টির মধ্যে ১টি মেরুদন্ডের "উস্উস্"(অস্থি-Coccyx)-কে অন্ততঃ ১০ মিনিট ধরে একটি পাথরের ওপর গ্যাসের সাহায্যে পোড়ানো হলে সেগুলি উপ্তপ্ত লোহা যেরূপ লাল বর্ণ লাভ করে তেমনি "উস্উস্"(অস্থি- Coccyx)গুলি প্রথমে লাল বর্ণ ধারণ করে পরে শীতল হয়ে কালো বর্ণ-এ অর্থাৎ কয়লায় পরিণত হলে ঐ "উস্উস্"(অস্থি- Coccyx)এর কয়লাগুলিকে জীবাণুমুক্ত বক্সের মধ্যে পুরে সানার সবচেয়ে বিখ্যাত Laboratory-Al Olaki Laboratory -তে নিয়ে গেলে সানা বিশ্ববিদ্যালয়ের Histology Pathologyতত্ত্বের অধ্যাপক  "উস্উস্"(অস্থি- Coccyx)গুলি বিশ্লেষণ করে দেখলেন যেআগুনে "উস্উস্"(অস্থি- Coccyx)গুলি বড় ধরনের প্রভাবে পড়েনি অর্থাৎ কেবল স্থুল কোষগুলি পুড়ে গেলেও মূল "উস্উস্"(অস্থি- Coccyxজীবন্ত রয়ে যায়।

(সুবহা--নাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহা--নাল্লাহিল আজীম)।






   আল্লাহ হাফিজ


সমাপ্ত

সম্পাদনায়ঃ শেখ মুহাম্মাদ রমজান হোসেন
প্রকাশনায়ঃজনাব মুহাম্মাদ আলাউদ্দীন
























Comments

Popular posts from this blog

THE CENTER FOR PAN ISLAMIC SCIENCE & TECHNICAL RESEARCH(CPISTR)